• বৃহস্পতিবার ১লা জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ ১৮ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

    শিরোনাম

    স্বপ্নচাষ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন  

    অক্সিজেনের নল নাকে নিয়ে রিকশা চালানো সেন্টুর ফুসফুসে সংক্রমণ

    স্বপ্নচাষ প্রতিবেদক, রাজশাহী

    ১৮ মে ২০২৩ ৮:২৪ অপরাহ্ণ

    অক্সিজেনের নল নাকে নিয়ে রিকশা চালানো সেন্টুর ফুসফুসে সংক্রমণ

    শ্বাসকষ্টের ব্যাধি থাকায় দীর্ঘ সাত বছর ধরে অক্সিজেনের নল নাকে নিয়ে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালান মাইনুজ্জামান সেন্টুর অসুস্থতা বেড়ে যাওয়া রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। গত রোববার রাতে শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। সেখানে তার ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। ফলে ৫৭ বছর বয়সী এই বৃদ্ধ আর রিকশা চালাতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

    রিকশাচালক মাইনুজ্জামান সেন্টুর বাড়ি রাজশাহী নগরীর কলাবাগান এলাকায়। তিনি এক ছেলে ও দুই মেয়ের জনক। ছেলেমেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে বিয়ে করে পবা উপজেলার দারুশা গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। মেয়েরাও থাকেন শ্বশুরবাড়িতে। নগরের কলাবাগান এলাকায় দুই হাজার টাকার ভাড়াবাসায় মাইনুজ্জামান ও তার স্ত্রী চম্পা বেগম থাকেন। অসুস্থ হওয়ায় বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের ১২ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি। যক্ষ্মার পাশাপাশি তার ফুসফুসে সিওপিডি সংক্রমণও ধরা পড়েছে।

    জানা যায়, মাইনুজ্জামান ওরফে সেন্টু সংসার চালাতে ঋণ নিয়ে একটি রিকশা কিনেছিলেন। শ্বাসকষ্টের ব্যাধি থাকায় সেই রিকশার হেন্ডেলের সঙ্গে অক্সিজেন সিলেন্ডার বেঁধে তার নল নাকে লাগিয়ে সাড়া শহর চষে বেড়াতেন। অসুস্থ হয়েও জীবন যুদ্ধে টিকে থাকতে রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়েই রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন তিনি। গত রোববার রাতে শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে রামেক হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি।

    অসুস্থ মাইনুজ্জামান সেন্টু বলেন, ‘অক্সিজেন পাইপ (নল) খুললে আমি কথা বলতেই পারি না। যতক্ষণ অক্সিজেন চলে ততক্ষণ ভালো থাকি। প্রতিদিন তিনটা করে অক্সিজেন সিলিন্ডার লাগে আমার। অক্সিজেন সিলিন্ডারের টাকা কিভাবে জোগাড় করি তা বলার ভাষা নেই। গেল দেড় মাসে তিনবার রামেক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। এই রিকশা চালিয়ে নিজের সংসার ও চিকিৎসার খরচ চালিয়ে আসছিলাম।’

    তিনি আরও বলেন, আমার আগে ভাজাপোড়ার দোকান ছিল। ২০১৫ সালের দিকে সেই দোকান বন্ধ হয়ে যায়। তারপরে ২০১৬ সালের দিকে আশা নামের একটি এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা কিস্তি (ঋণ) নেই। আরও কিছু ধারদেনা করে ৮০ হাজার টাকায় একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা কিনি। তারপর থেকে রিকশা চালাই। প্রতিদিন ওষুধ কেনা বাবদ ৬০০ টাকার বেশি লাগে। এছাড়া বাড়ি ভাড়া বাবদ প্রতিমাসে মালিককে ২ হাজার করে টাকা দিতে হয়। রিকশা চালিয়ে টাকা জোগাড় করে এগুলোর পেছনে খরচ করি।

    মাইনুজ্জামান সেন্টুর স্ত্রী চাম্পা বেগম বলেন, ‘অক্সিজেন ছাড়া সে চলতে পারে না। আমাদের দুইটা অক্সিজেনের সিলিন্ডার আছে। একটা মামা শ্বশুর দিয়েছে। আরেকটা এলাকার একটা মানুষ দিয়েছে। অক্সিজেনের সিলেন্ডার কিনতে হয় না। কিন্তু প্রতিদিন আমাদের অক্সিজেন কিনতে হয়। আগে প্রতি সিলিন্ডার অক্সিজেনের জন্য ২০০ টাকা করে দিতে হতো। পরে অক্সিজেনের দোকানদারদের সঙ্গে কথা বলে ১৫০ টাকা করা হয়েছে।’

    সেন্টুর মেজ মেয়ে আখি খাতুন বলেন, যক্ষ্মার পাশাপাশি এখন বাবার ফুসফুসে নতুন করে সমস্যা ধরা পড়েছে। ডাক্তার বলেছে ভারী কোনো কাজ না করতে। সব সময় অক্সিজেন নিতে হবে।

    হাসপাতালের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কর্তব্যরত চিকিৎসক শামিম আলম বলেন, সেন্টুকে আমরা সর্বচ্চ চিকিৎসা সেবা দিচ্ছি। তিনি আগে থেকেই যক্ষ্মায় আক্রান্ত ছিলেন। তখন থেকেই তার হার্টেও সমস্যা। হার্টে তার যে পরিমাণ অক্সিজেন সরবরাহ হওয়ার কথা তা হচ্ছে না। পাশাপাশি ফুসফুসে নতুন করে সংক্রমণ হয়েছে। বেশি পরিশ্রম করলে এ সমস্যা আরও বেড়ে যাবে। জরুরি ভিত্তিতে তার অক্সিজেন মেশিন প্রয়োজন। যাতে দিন-রাত সহজেই অক্সিজেন নিতে পারেন।

    রামেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. এফ এম শামীম আহমেদ বলেন, হাসপাতালের চিকিৎসকরা সেন্টুকে দেখেছেন। তার অবস্থা এখন মোটামুটি স্থিতিশীল। তিনি আগে থেকেই যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত ছিলেন। সেখান থেকেই তার ফুসফুসে সিওপিডি সংক্রমণ হয়েছে।

    স্বপ্নচাষ/একে

    Facebook Comments Box
    স্বপ্নচাষ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন  

    বাংলাদেশ সময়: ৮:২৪ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৮ মে ২০২৩

    swapnochash24.com |

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
     
    ১০১১১২১৩১৪১৫১৬
    ১৭১৮১৯২০২১২২২৩
    ২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
    advertisement

    সম্পাদক : এনায়েত করিম

    প্রধান কার্যালয় : ৫৩০ (২য় তলা), দড়িখরবোনা, উপশহর মোড়, রাজশাহী-৬২০২
    ফোন : ০১৫৫৮১৪৫৫২৪ email : sopnochas24@gmail.com

    ©- 2023 স্বপ্নচাষ.কম কর্তৃক সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত।