সংগৃহীত
মাঠে ও মাঠের বাইরের মুশফিক অনেক বেশি সুশৃঙ্খল, গোছানো। সে অর্থে ক্যারিয়ারে বড় ধরনের কোনো বিতর্কর জন্ম দেননি। তবে তার ১৫ বছরের আর্ন্তজাতিক ক্যারিয়ারে অন্তত তিনটি ঘটনা আছে, যেখানে মুশফিকুর রহীমের আচরণ ও কর্মকান্ড নিয়ে কথা হয়েছিল। তিনি সমালোচিতও হয়েছিলেন।
সেগুলো নিয়ে কি কোন আক্ষেপ আছে? যেমন তিনি একবার জিম্বাবুয়ে সফরের মাঝপথেই অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন? তা নিয়ে কথা হয়েছে।
২০১৬ সালে ভারতের সাথে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ব্যাঙ্গালুরুতে পরপর দুই বলে চার হাঁকিয়ে সহজ সমীকরণটাকেও বাস্তবে পরিণত করতে পারেননি। বেশি উল্লসিত হয়ে পড়েছিলেন। ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে আউট হয়ে প্রকারন্তরে দলকেই হারিয়ে দিয়েছিলেন। আরেকবার ভারতকে হারিয়ে ওয়েষ্ট ইন্ডিজ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জেতার পর টুইট করে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন।
কখনো কি মনে হয় সেগুলো না করলেও হতো? পেছন ফিরে তাকালে কি এখনও মনে হয় ওসব না করলেও চলতো? রোববার রাতে ইউটিউব লাইভে নোমান মোহম্মদের প্রশ্ন ছিল এমন। এসব নিয়ে আপনার নিজের কি কোন আক্ষেপ আছে?
জবাবে মুশফিক অনেক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ দিয়েছেন। তার মধ্যেও স্বীকার করেছেন, ভারতের সাথে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তিনি যে বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে আউট হয়েছেন, তা না করে গ্রাউন্ড শটে বাউন্ডারি বা ডাবলস নেয়ার চেষ্টা করলে হয়ত চিত্রটা ভিন্ন হতে পারতো।
মুশফিক বলেন, ‘দেখেন শুধু ক্রিকেট রিলেটেড না, অনেক স্টোরি আছে জীবনে, যেটা পরে মনে হয়- না করলেও হতো। পরে হয়তো মনে হয় ওই সময়ে সেটা না করলেই বোধ হয় ভাল হতো। মনে হয় ওই সময় সেটা না করলে হয়ত অন্যরকম করতে পারতাম। আসলে এগুলো পরেই মনে হয়। আগে মনে হলে তো আর করতাম না। আমি মানুষ। আর মানুষ হিসেবে জীবনে ভুল কিছু করবোই। সেটা অস্বাভাবিক নয়।’
জিম্বাবুয়ে সফরের মাঝপথে অধিনায়ত্ব থেকে সরে দাঁড়ানো নিয়ে তার কোন আক্ষেপ নেই। সে সম্পর্কে মুশফিকের ব্যাখ্যা, ‘আসলে পরিবেশটা ঠিক আমার পক্ষে ছিল না। আমার কাছে মনে হয়েছে, অধিনায়ক হিসেবে আমি দলকে সেভাবে উদ্দীপ্ত ও অনুপ্রাণিত করতে পারছি না। আর দলের অন্যতম সিনিয়র প্লেয়ার হিসেবে হয়তো তেমন কিছু দিতে পারছি না- এই ভেবেই আসলে অধিনায়ত্ব ছেড়েছিলাম।’
ভারতের বিপক্ষে ব্যাঙ্গালুরুতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ম্যাচেও পরপর দুই বলে বাউন্ডারি হাঁকানোর পর উল্লসিত হয়ে পরের বলে ছক্কা হাঁকাতে গেছেন, তা মানতে নারাজ মুশফিক। তার কথা, ‘উল্লসিত শব্দটা বলবো না। আমি চেয়েছিলাম যে আমি স্ট্রাইকে থেকেই যেন খেলাটা শেষ করত পারি। কারণ, নন স্ট্রাইক ব্যাটসম্যান রিায়াদ ভাইও সেট ছিলেন না। আমিও যে সেট ছিলাম তা বলবো না। তবে যেহেতু আগের দুই বলে পরপর চার মেরেছিলাম, তাই একটু হয়ত আস্থা ও বিশ্বাস বেশি ছিল। এটা সত্য, পরপর দুই বাউন্ডারির পর আর চার ও ছক্কার দরকার ছিল না। আমি চেয়েছিলাম বোলার পরপর দুই বলে চার হজম করে চাপে আছে , সে আন্ডার প্রেশারে- বাজে বল করবেই। আসলে আমার প্রয়োগটা হয়ত ঠিক ছিল না। না হয় সেটা ক্যাচ না হয়ে যে কোন জায়গা দিয়ে সীমানার ওপারে যেতে পারতো।’
আর ওয়েষ্ট ইন্ডিজ ভারতকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জেতার পর টুইট নিয়ে মুশফিক বলেন, ‘আমি ইচ্ছে করে কখনো করিনি। কাউকে কষ্ট দেবার জন্য তো নয়ই। ওয়েষ্ট ইন্ডিজ আমার অনেক ফেবারিট একটি দল। হয়তবা পরিবেশ ও রকম হয়ে গেছে। লিখা পড়ে যাই মনে হোক না কেন, আমার উদ্দেশ্য মোটেই নেতিবাচক ছিল না। কোন দলকে ছোট বা হেয় প্রতিপন্ন করে আমি সেটা লিখিনি। তারা দারুণ এক ম্যাচ জিতেছে, ইন্ডিয়ার মত দলের বিপক্ষে, তাও তাদেরই মাটিতে এমন এক জয় পেয়েছিল, তাই আবেগতাড়িত হয়ে লিখেছিলাম। আমি এখনো বাংলাদেশের পরে যদি কোন দলকে সমর্থন করি সেটা ওয়েষ্ট ইন্ডিজ। অনেকে হয়তো ভেবেছেন, ভারত হেরেছে ,আমি তাই লিখেছি। সেটা মোটেই ঠিক নয়।’
ব্যাঙ্গালুরুর ঘটনা থেকে শিখছেন জানিয়ে মুশফিক বলেন, ‘সেখান থেকে আমি শিখেছি। বলতে পারেন, ব্যাঙ্গালুরুর সে ঘটনা আমার জন্য এক শিক্ষা হয়ে আছে এবং পরবর্তীতে আয়ারল্যান্ডে আর নিদাহাস ট্রফিতে তা কাজে লাগিয়ে অন্য পথে হাঁটার চেষ্টাও করেছি।’
ব্যাঙ্গালুরুর ১ রানের হার নাকি ২০১২’র এশিয়া কাপের ২ রানের হার- কোনটা বেশি কষ্টের? মুশফিকের জবাব, ‘এশিয়া কাপের ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে ২ রানের হারটাই ছিল বেশি কষ্টের। অধিনায়ক হিসেবে আমার প্রথম ফাইনাল খেলা। কখনো ভোলার মত নয়। ওই আসরে আমরা দুর্দান্ত পারফরম করে ভারত ও শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছিলাম; কিন্তু অল্পের জন্য পারিনি। এত ক্লোজ। সব সময়ই খারাপ লাগে।’
স্বপ্নচাষ/এসএস
বাংলাদেশ সময়: ৭:১৮ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১৮ মে ২০২০
swapnochash24.com | sopnochas24