আসন্ন রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও বর্তমান মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনকে চ্যালেঞ্জ জানাতে বিএনপির সাবেক নেতা মো. সাহিদ হাসান প্রার্থী হচ্ছেন বলে গুঞ্জন উঠেছিল। তবে নির্বাচনে আগ্রহ হারিয়ে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বিষয় থেকে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির রাজশাহী মহানগর শাখার সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাহিদ হাসান।
এ ছাড়া বিএনপির অন্য কোনো প্রার্থীও রাসিক নির্বাচনে মেয়র পদে লড়বেন না বলে দলের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে। তাই শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় ফুরফুরে মেজাজে আছেন মেয়র পদে আবারও দলীয় নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন পাওয়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও বর্তমান মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন।
এদিকে মেয়র হিসেবে দুই মেয়াদে রাজশাহীকে উন্নয়ন-সৌন্দর্যে বদলে দেয়ায় নগরবাসীর মনেও ইতিবাচকভাবে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। ফলে আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট এই প্রার্থী মেয়র পদে আবারও জয়ের মালা পরার ব্যাপারে বেশ ‘আত্মবিশ্বাসী’।
এসব দৃষ্টিকোণ থেকে বর্তমান মেয়র লিটন ‘নির্ভার’ হলেও তার প্রচারকাজ থেমে নেই। রাসিক নির্বাচন সামনে রেখে প্রতিনিয়তই নগরবাসীর সঙ্গে কুশল বিনিময়, মতবিনিময় ও ঈদ-পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময়ের মাধ্যমে বেশ জোরেশোরেই ভোটের মাঠে নেমেছেন তিনি।
জানা গেছে, আগামী ২১ জুন অনুষ্ঠেয় রাজশাহী সিটি নির্বাচনে মেয়র-কাউন্সিলর প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন আগামী ২৩ মে। এরই মধ্যে মেয়র পদে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বাদেও দুটি রাজনৈতিক দল থেকে মেয়র পদে মনোনয়নপত্র নেয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কেউ মনোনয়নপত্র দাখিল করেননি।
মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বিষয় থেকে সরে আসার বিষয়টি জানতে চাইলে মো. সাহিদ হাসান বলেন, ‘আসন্ন সিটি নির্বাচনে বিএনপি এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমি মনে করি, আসন্ন রাসিক নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হবে না। নির্বাচন প্রশ্নে বিএনপির নীতিগত সিদ্ধান্তের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। তাই আসন্ন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বিষয় থেকে সরে এসেছি।’
গতবার রাসিক নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের কাছে বিপুল ভোটে পরাজিত হন বিএনপির প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। আসন্ন সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া এই সরকারের অধীনে নির্বাচন করা সম্ভব নয়। তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ছাড়া নির্বাচনে যাবে না বিএনপি।’
শুধু বুলবুলই নয়; সিটি নির্বাচন নিয়ে নগরজুড়ে বিএনপির প্রায় সব নেতাই একই সুরে কথা বলেছেন। এমনকি রাজশাহীতে বিএনপির এখন পর্যন্ত কোনো কার্যক্রমও চোখে পড়েনি। সবকিছু মিলিয়েই রাসিক নির্বাচনে বিএনপি আসবে কি না, তার নিশ্চয়তা এখন পর্যন্ত নেই। যদিও ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী রাসিক নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন ২৩ মে পর্যন্ত। এ ছাড়া গণসংহতি আন্দোলনের নেতা অ্যাডভোকেট মুরাদ মোরশেদ গতবার মেয়র পদে ভোট করলেও এবার নির্বাচনে আসছেন না বলে জানা গেছে।
তবে রাসিক নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী ঘোষণা করেছে জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। তাই বিএনপিহীন রাসিক নির্বাচনে কেউ শাসক দলের প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারবে না বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
নির্বাচনী আইন অনুযায়ী আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার শুরু হওয়ার আগে ভোট চাওয়ার সুযোগ নেই। আর প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দের পরই মাঠে নামতে পারবেন প্রার্থীরা। তবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার পর লিটন মাঠে আছেন অন্য কৌশলে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে বসছেন। মতবিনিময় করছেন; সমস্যা শুনছেন, সমাধানের আশ্বাস দিচ্ছেন।
গত ৩ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঘোষিত নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী, আগামী ২১ জুন অনুষ্ঠিত হবে রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচন। নির্বাচন সামনে রেখে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লা পর্যন্ত প্রার্থীর সমর্থনে নানা কৌশলে প্রচার শুরু করেছেন। প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় নির্বাচনী কমিটি করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ ছাড়াও যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ, ছাত্রলীগসহ সব সহযোগী ও ভাতৃপ্রতিম সংগঠন এককাট্টা হয়ে মাঠে নেমেছে।
এদিকে ১৪ দলের অন্যতম প্রধান শরিক দল জাতীয় পার্টির রাজশাহী মহানগর শাখার আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম স্বপন জানান, ‘দল থেকে আমি মনোনয়ন পেয়েছি। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে নেতা-কর্মীদের নিয়ে প্রচারেও নেমেছি।’
অন্যদিকে গত ১৯ এপ্রিল দলীয় মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। এবার দলের প্রার্থী পরিবর্তন করে রাজশাহী নগর শাখার সিনিয়র সহসভাপতি মাওলানা মুরশিদ আলম ফারুকীকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছে। তিনি ‘হাতপাখা’ প্রতীক নিয়ে এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মাওলানা মুরশিদ আলম ফারুকী পেশায় কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক। এ ছাড়া তিনি একটি মসজিদের ইমামও। গ্রামের বাড়ি লালমনিরহাট হলেও তিনি বর্তমানে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার।
মাওলানা মুরশিদ আলম ফারুকী বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক আগে থেকেই প্রচার শুরু হয়েছে। গত ১ মে শ্রমিক দিবসের কর্মসূচি থেকে আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী কার্যক্রমও শুরু করেন তিনি।
সার্বিক বিষয়ে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, বিএনপি জনগণের রায়কে ভয় পায় বলে নির্বাচনে আসতে চায় না। তবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও ইসলামী শাষণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে জোরালোভাবে মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছে। আগামী ২৩ মে পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন প্রার্থীরা। এরপর প্রতিদ্বন্দ্বীদের সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে।
স্বপ্নচাষ/একে
বাংলাদেশ সময়: ৬:২৭ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২০ মে ২০২৩
swapnochash24.com | sopnochas24
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | |||||
৩ | ৪ | ৫ | ৬ | ৭ | ৮ | ৯ |
১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬ |
১৭ | ১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ | ২২ | ২৩ |
২৪ | ২৫ | ২৬ | ২৭ | ২৮ | ২৯ | ৩০ |