সুপার সাইক্লোন আম্ফানের তাণ্ডবে উপকূলীয় অঞ্চল পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলা লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। একই সাথে পল্লী বিদ্যুতের বিদ্যুৎ ব্যবস্থাও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তবে মাত্র ৫ ঘণ্টায় উপজেলা সদর ও ৪৮ ঘণ্টায় সমগ্র উপজেলায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করে রেকর্ড গড়েছে গলাচিপা পল্লী বিদ্যুৎ অফিস।
জানা যায়, গত ২০ মে সন্ধ্যা ৭টার দিকে শুরু হওয়া আম্ফানের তাণ্ডবে পল্লী বিদ্যুতের অনেক পোল, মিটার, ট্রান্সফর্মারসহ অনেক ইকুইপমেন্ট নষ্ট হয়ে যায় । বিদ্যুৎ লাইনের উপরে অসংখ্য গাছ ভেঙে পড়ে তার ছিড়ে যায়। এতে গলাচিপা জোনাল অফিসের প্রায় ৫০ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েন।
বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজারের নির্দেশনা অনুযায়ী ঝড় দুর্বল হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে সেহরি খেয়ে ১১০ জন দক্ষ ও অদক্ষ জনবল দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে লাইন মেরামত ও পুনর্বাসন করে। ৭৫ জনের একটি দল প্রথমে ৩৩ কেভি মূল লাইন (যে লাইনের মাধ্যমে পটুয়াখালী হতে গলাচিপা উপকেন্দ্রে বিদ্যুৎ আসে) মেরামত ও পুনর্বাসন কাজ শুরু করেন।
৩৫ জনের দ্বিতীয় দল উপজেলা সদরের লাইন মেরামত ও পুনর্বাসন কজ শুরু করেন। লাইনের উপর হতে গাছপালা অপসারণ পূর্বক লাইন পুনর্বান সংক্রান্ত সকল কার্যাদি সম্পন্ন করে সকাল ১১ টার মধ্যেই উপজেলা সদর বিদ্যুতায়িত করেন।
অথচ, উপজেলা সদর এলাকার লোকজন ঝড়ের তাণ্ডব দেখে অনুমান করেছিলেন বিদ্যুৎ পেতে ২/৩ দিন সময় লাগতে পারে। কিন্তু সকাল ১১টায় বিদ্যুৎ সচল করে উপজেলাবাসীকে রীতিমতো ম্যাজিক দেখিয়ে দেন কর্মীরা। একই সাথে তাদের নিকট পল্লী বিদ্যুতের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করে তোলেন। যা সর্বস্তরে প্রসংশিত হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে গ্রামাঞ্চলের লাইনসমূহ সচল করার জন্য বিভিন্ন উপদলে বিভক্ত হয়ে কাজ শুরু করেন এবং মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে উপজেলার সকল ইউনিয়নের বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করেন। নষ্ট ট্রান্সফর্মার, ভাঙা পোল ও মিটার পরিবর্তন করে এবং ছেড়া তার জোড়া দিয়ে একটা নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) এর প্রাদুর্ভাব উপেক্ষা করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পল্লী বিদ্যুতের কর্মীবাহিনী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এ জন্য প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তি ও সর্বস্তরের জনগণ তাদেরকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন।
গলাচিপা জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী মাইনউদ্দীন আহমদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্ফান মোকাবলায় বিভিন্ন স্তরে প্রস্তুতি ছিল। পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে ৩৩ কেভি লাইনে উইন্ড গাই (ঝড় বাতাস হতে লাইনকে রক্ষা করার জন্য টানা) ঝড়ের একদিন পূর্বে স্থাপন করা হয়েছিল। ঝড় পরবর্তী সময় ক্ষয়ক্ষতির উপর ভিত্তি করে কয়েক ধরনের প্রস্তুতি ছিল। প্রাদুর্ভাব কমতে শুরু করলে ভোররাত্রে ১১০ জন কারিগরিভাবে দক্ষ/অদক্ষ জনবল সমন্বয়ে গঠিত “দুর্যোগে আলোর গেরিলা ” বাহিনী লাইন চালুর জন্য প্রয়োজনীয় কাজ শুরু করে। প্রথমে ৩৩ কেভি লাইনের উপর থেকে ছোট বড় অনক গাছ অপসারণ, পাঁচটি ইনসুলেটর পরিবর্তন, দুইটি নতুন টানা তার স্থাপন এবং বিভিন্ন স্থানে খুলে পড়া তার পুনরায় স্থাপন করে সকাল ১১টার মধ্যেই উপজেলা সদরের লাইন চালু করা হয়।
পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে সকল এলাকায় বিদ্যুতের লাইন চালু করার জন্য বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে বেরিয়ে পড়েন এবং রমজানের রোজা থেকে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন এবং স্থানীয় জনগণ ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সতস্ফুর্ত সহযোগিতার কারণে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সকল গ্রাহককে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। এছাড়াও এই এলাকাটি দুর্যোগপূর্ণ এলাকা হওয়ায় সব সময় সমস্যা লেগেই থাকে যা সামাল দিতে হয়। এর জন্য পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী ভিলেজ ইলেকট্রিশিয়ান ও স্থানীয় জনগণ ও গণ্যমান্য ব্যক্তবর্গের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, ভবিষ্যতে এরূপ কোনো দুর্যোগ এলে সকলে এভাবেই সহযোগিতা করবেন।
পটুয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী মনোহর কুমার বিশ্বাস জানান, পটুয়াখালী বিদ্যুৎ সমিতির বর্তমান গ্রাহক প্রায় ৪ লাখ ৭০ হাজার। সবাইকেই দ্রুততার সাথে বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা হয়েছে।
স্বপ্নচাষ/আরএস
বাংলাদেশ সময়: ৮:৫৫ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ২৯ মে ২০২০
swapnochash24.com | sopnochas24
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | |||||
৩ | ৪ | ৫ | ৬ | ৭ | ৮ | ৯ |
১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬ |
১৭ | ১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ | ২২ | ২৩ |
২৪ | ২৫ | ২৬ | ২৭ | ২৮ | ২৯ | ৩০ |