দিন দিন রাজশাহী অঞ্চলের আঁটি জাতীয় আম পাকার সময় ঘনিয়ে আসছে। কিন্তু করোনাভাইরাসের তাণ্ডবে স্থবির হয়ে পড়েছে গোটা বিশ্ব। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। করোনা ভাইরাসের প্রভাবে আমের কেনাবেচার হাট ও আড়তগুলোতে প্রস্তুতি চোখে পড়ছে না। ফলে দুশ্চিন্তায় আম চাষিদের মাথায় হাত পড়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, এপ্রিল মাসেই যেখানে আম বাজারজাত করণের সার্বক্ষণিক কর্মযজ্ঞ চোখে পড়ত সেখানে এখনো পর্যন্ত কোনো প্রকার প্রস্তুতিই শুরু হয়নি। প্রশাসনের পক্ষেও আম পাড়ার জন্য এখনো পর্যন্ত দেওয়া হয়নি নির্দিষ্ট কোনো দিনক্ষণ। সর্বত্রই অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয় আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা বলছেন বর্তমান প্রেক্ষাপটের কোনো পরিবর্তন না হলে এ বছর আমে ব্যাপক লোকসান গুনতে হবে।
রাজশাহী অঞ্চলের সর্ববৃহত্ আমের আড়ত বানেশ্বর হাটের ব্যবসায়ীরা জানান, গত বছরও এপ্রিল মাসেই আম পাড়ার প্রস্তুতি শেষ হয়ে যায়। আর মে মাসের শুরুতেই জেলা প্রশাসক আম বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময়ের আয়োজন করেন। মতবিনিময়ে আম ক্রয়-বিক্রয়ে কয়েকটি ধাপে নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণও করে দেন। এতে আমের প্রকার ভেদে ছয়টি ধাপে আম কেনাবেচা করতে বলা হয়। সে নির্দেশনা মোতাবেক গত বছর ১৫ মে থেকে গুটি জাতীয় আম পাড়া ও কেনাবেচা শুরু করা হয়। তবে চলতি বছর করোনা ভাইরাস প্রভাব বিস্তার করায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত আম পাড়ার কোনো দিকনির্দেশনা আসেনি। এছাড়া আম পাড়ার মৌসুম শুরু হওয়ার প্রায় এক মাস আগেই জেলার সর্ববৃহত্ আড়তগুলোতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজ শুরু হতো। এবার চলমান লকডাউনের কারণে আড়তগুলো এখনো বন্ধই রয়েছে। কোনো প্রস্তুতিই চোখে পড়েনি।
আম চাষি হাবিবুর রহমান বলেন, অনুকূল আবহাওয়া বিরাজ করায় এ বছর সকল আম বাগানে প্রচুর আম এসেছে। চাষিদের সময়মতো সঠিক পরিচর্যা ও এখনো পর্যন্ত প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় প্রায় প্রতিটি গাছে আমে পরিপূর্ণ হয়ে আছে। মৌসুমের শুরু থেকে চাষিরা আমের বাম্পার ফলনের আশা করছিল। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটের পরিবর্তন না হলে এবার আমে ব্যাপক লোকসানের হতে পারে।
বানেশ্বর বাজারের আড়তদার আসাদুজ্জামান বলেন, আড়তের পাশাপাশি কয়েক জন ব্যবসায়ী বাগান থেকে আম কিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে চাহিদা মোতাবেক সরবরাহ করেন। এ বছরের শুরুতে তাদের প্রায় ১০০ বিঘা আম বাগান কেনা আছে। করোনার কারণে এবার আমের বাজার কি হবে বলা মুশকিল। পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওলিউজ্জামান বলেন, করোনার প্রভাবের কারণে এখনো আম পাড়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে অচিরেই স্থানীয় আম চাষি ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে জেলা পর্যায়ে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হবে। সভায় কোন আম কখন পাড়তে হবে ক্রেতা-বিক্রেতাদের নির্দেশনা দেওয়া হবে। এছাড়া অসাধু ব্যবসায়ী ও চাষিরা যাতে আমে কোনো প্রকার বিষাক্ত কেমিক্যাল ব্যবহার না করতে পারে সে জন্য প্রশাসন সার্বক্ষণিক মনিটরিং করবে। এছাড়া কোথাও কোনো অনিয়মের খবর পেলে তাত্ক্ষণিক আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত বছর হাইকোর্ট মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহার প্রতিরোধে রাজশাহী অঞ্চলের আম বাগানে পুলিশ পাহারার নির্দেশনা দিয়েছিল। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা স্থানীয় আম ব্যবসায়ী ও বাগান মালিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এছাড়া আম বিদেশে রপ্তানির বিষয়ে ফ্রুটব্যাগিং পদ্ধতি ব্যবহারের পরামর্শ দেন।
স্বপ্নচাষ/আরএস
বাংলাদেশ সময়: ১:৫৭ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৭ মে ২০২০
swapnochash24.com | sopnochas24