অশ্লীল ভিডিও ফাঁসের ঘটনায় রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারকে অপসারণ দাবিতে আবারও মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। শনিবার বেলা ১১টায় নগরীর সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে রাজশাহী আওয়ামী পরিবারের উদ্যোগে এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
গত বৃহস্পতিবারও ‘সচেতন রাজশাহীবাসীর’ ব্যানারে একই দাবিতে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। তবে ডাবলু সরকারের ছোট ভাই নগরীর ২৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহনেওয়াজ সরকার সেডুর নেতৃত্বে সেই মানববন্ধনে হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ উঠে।
শনিবার দ্বিতীয় দিনের মতো আয়োজিত মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলে কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেন। তাদের হাতে ছিল ব্যানার প্ল্যাকার্ড। প্ল্যাকার্ডগুলোতে ‘রাজশাহীর সব অর্জন এক ব্যক্তির কারণে ধুলোয় মিশে যেতে পারে না। নেতৃত্বের অন্যতম মৌলিক গুণ হলো চরিত্র, ডাবলু সরকারের চরিত্রহীন পথচলাকে প্রতিরোধ করতে হবে। আওয়ামী লীগের ঐতিহ্য ও কৃষ্টির সড়কে দিকভ্রষ্ট ডাবলু সরকারকে পথিক হিসেবে প্রত্যাশা করি না। পৌরুষত্ব যৌনাঙ্গ প্রদর্শনে নিষ্পত্তি হয় না, হয় তার কর্মে’এমন সব লেখা প্রদর্শন করা হয়।
এছাড়াও ‘হাইব্রিড ডাবলু সরকার- বহিষ্কার হওয়া দরকার। ডাবলু সরকারের নৈতিক স্খলনের দায় আওয়ামী লীগ নিতে পারে না। ডাবলুর পেছনের গডফাদার কে, রাজশাহীবাসী জানতে চায়? সুপ্রিয় সাধারণ সম্পাদক জননেতা ওবায়দুল কাদের, খেলা হবে, ডাবলুর মতো ব্যক্তি হটিয়ে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রী, নির্বাচনের বছরে কারো দ্বারা দল বিব্রত হয়, এমন কাউকে এক সেকেন্ড দলে রাখা যায় না’- এমন লেখাও রয়েছে প্ল্যাকার্ডে।
মানববন্ধনে বহন করা ব্যানারে লেখা ছিল, ‘ডাবলু সরকারের নোংরা ভিডিও রাজনীতিতে অশনি সংকেত ও সমাজের জন্য বিপজ্জনক। অবিলম্বে ডাবলু সরকারকে রাজনীতি থেকে অপসারণ করতে হবে।’
মিছিলপূর্ব সমাবেশে আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট আবু রায়হান মাসুদ বলেন, ‘জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। ডাবলু সরকারেরা রাজনীতির নামে যা ইচ্ছে করবে, আমাদের নাকি তা মেনে নিতে হবে। তাদের ক্ষমতার দৌড় এমন জায়গায় পৌঁছেছে, মা-বোনেরাও তাদের কাছে নিরাপদে নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, একজন শেখ হাসিনার উন্নত রাষ্ট্রভাবনার চিন্তা এই ডাবলু শ্রেণিদের ছুঁয়ে যায় না। তারা দিনভর টাকা কামানোর ধান্ধা করে। পদ টিকিয়ে রাখতে গডফাদারদের কাছে পয়সা তুলে দেয়।’
আবু রায়হান মাসুদ আরও বলেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাতার সফর শেষ করা পর্যন্ত অপেক্ষা করব। তিনি ফিরে এলেই চূড়ান্ত কর্মসূচি দিয়ে সমাধান খুঁজে নেব। অতঃপর, মহান মার্চ মাসের রাজনৈতিক ঐতিহাসিকতা নিয়ে নগরবাসী একাট্টা হতে চাই। তবে সবার আগে নৈতিক স্খলনকে সঙ্গী করা ডাবলু সরকারকে অতি অবশ্যই বহিষ্কার করতে হবে।’
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সাবেক কৃষক লীগ নেতা মেহবুব রশীদ বাবু, সাবেক ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামান বুলবুল, মো. বেলাল হোসেন, আব্দুল হালিম, শোভা সরকার প্রমুখ।
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ৩ মিনিট ২৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, বাথরুমের ভেতরে ডাবলু সরকার ভিডিও কলে কারো সঙ্গে কথা বলছেন। এক পর্যায়ে নগ্ন হয়ে অপরপ্রান্তে থাকা কাউকে শরীর তথা যৌনাঙ্গ দেখাচ্ছেন। অশ্লীল ওই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ায় মহানগরীর বোয়ালিয়া থানায় ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা করেন ডাবলু সরকার। ডাবলু সরকারের দাবি, ভিডিওতে থাকা ব্যক্তির মুখ তার। তবে শরীরের নিচের অংশ অন্য কারও। ভিডিও সম্পাদনার মাধ্যমে অন্য কোনো ব্যক্তির শরীরে তার মুখমণ্ডল বসিয়ে দেয়া হয়েছে।
ওই সময় ডাবলু সরকার গণমাধ্যমকে বলেন, তাকে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে হেয় করতে একটি পক্ষ ভিডিওটি সম্পাদনা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। তাকে নিয়ে তৈরি করা এই ভিডিওর কোনো সত্যতা নেই।
স্বপ্নচাষ/জেডএস
বাংলাদেশ সময়: ১:৪৯ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৪ মার্চ ২০২৩
swapnochash24.com | sopnochas24