দেশে মা ইলিশ সংরক্ষণ ও নিরাপদ প্রজননের জন্য নিষেধাজ্ঞার যে সময় দেওয়া হয় তা সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের অর্থায়নে ২০১৮ সাল থেকে মা ইলিশের ওপর পর্যবেক্ষণ চালানো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ফিশারীজ বিভাগের অধ্যাপক ইয়ামিন হোসেন। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে দৈনিক বাংলার কাছে এ দাবি করেন তিনি।
দেশে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধের সময় শুরু হওয়ার পর একেক নদীতে একেক সময় মা ইলিশ প্রবেশ করে জানিয়ে অধ্যাপক ইয়ামিন হোসেন বলেন, নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পরেও জেলেদের জালে প্রচুর পরিমাণ মা ইলিশ ধরা পড়ে। তাই এই ইলিশ ধরা নিষিদ্ধের সময়টি নদীভিত্তিক হওয়া উচিত, সামগ্রিকভাবে নয়।
জানা যায়, মা ইলিশের প্রজনন নিরাপদ রাখার লক্ষ্যে সারাদেশে ২২ দিনের জন্য ইলিশ ধরা বন্ধ রয়েছে। গত ৭ অক্টোবর থেকে এ নিষেধাজ্ঞা চলছে। নিষেধাজ্ঞার কারণে আগামী ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ পরিবহন, ক্রয়-বিক্রয়, মজুত ও বিনিময় করা যাবে না। প্রতিবছরের মতো এবারও ইলিশের প্রজনন নির্বিঘ্ন করতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে অধ্যাপক ইয়ামিন হোসেন বলেন, মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের অর্থায়নে পরিদর্শনকালে ২০১৮ সাল থেকে প্রতি মাসে পদ্মা নদীতে বাচ্চা থেকে বড় সব ধরণের ১০০টি করে ইলিশ ধরেছি। ওই ইলিশ ফারাক্কা বাঁধ থেকে শুরু করে কাজিরহাট, চাঁদপুর থেকে লক্ষ্মীপুর এবং বরগুনা থেকে বঙ্গপসাগর পর্যন্ত ঘুরে ঘুরে ধরা হতো। ভিন্ন ভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করতে এভাবে বিভিন্ন জায়গা থেকে ইলিশ ধরেছি। এই সকল নমুনা পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, ইলিশের ডিম দেওয়ার (স্পোনিং) সময়টা ভিন্ন।
পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, দেশে নিষেধাজ্ঞার সময় যখন শুরু হয় তার এক সপ্তাহ পর মা ইলিশ পদ্মায় প্রবেশ করে। মেঘনায় নিষেধাজ্ঞার ৩-৪ দিন পরে এবং বঙ্গপসাগর সংলগ্ন নদীগুলোতে নিষেধাজ্ঞার সময়ের সাথে সাথেই মা ইলিশ প্রবেশ করে। ফলে দেখা গেছে, নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ার এক সপ্তাহ পরও পদ্মা নদীতে মা ইলিশ থেকে যায়। তাই এই সময় পদ্মা নদীতে জাল ফেললে প্রচুর মা ইলিশ পাওয়া যায়। মেঘনা নদীর ক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা যায়। যেহেতু দেশে এক সপ্তাহ আগে থেকেই নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়, সেহেতু জেলেরা আগেই মাছ ধরা বন্ধ করে নিরুপায় হয়ে পড়েন। অন্যদিকে নিষেধাজ্ঞার এক সপ্তাহ পরও মা ইলিশ নদীতে থেকে যাওয়ায় জেলেদের জালে ধরা পড়ছে। ফলে দেশও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে আবার জেলেও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। ফলে ইলিশ নিয়ে আরও বেশি বেশি গবেষণার জন্য সরকারি ফান্ড বাড়ানোর দাবি জানান অধ্যাপক ইয়ামিন হোসেন।
স্বপ্নচাষ/এসএস
বাংলাদেশ সময়: ১১:১৭ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২২ অক্টোবর ২০২২
swapnochash24.com | sopnochas24