• শুক্রবার ২৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ ১৪ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

    শিরোনাম

    স্বপ্নচাষ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন  

    এক ক্যাচ ছাড়ার খেসারত ৪৮৩ রান!

    স্বপ্নচাষ ডেস্ক

    ০৩ জুন ২০২০ ১১:২৯ পূর্বাহ্ণ

    এক ক্যাচ ছাড়ার খেসারত ৪৮৩ রান!

    ফাইল ছবি

    সাইমন ব্রাউনের ডেলিভারি পিচ করে বেরিয়ে যাচ্ছিল হালকা সুইং করে। ব্যাকফুটে ড্রাইভ করলেন ব্রায়ান লারা, ব্যাটের কানায় লেগে বল উইকেটের পেছনে। কিন্তু ব্যাটসম্যানের মতো গড়বড় করে ফেললেন উইকেট-কিপার ক্রিস স্কটও। তার গ্লাভসে চুমু দিয়ে বল টুপ করে পড়ল মাটিতে। হতাশায় গ্লাভসে মুখ ঢেকে নিজেকে আড়াল করতে চাইলেন স্কট। কে জানত, ব্যর্থতার ওই মুহূর্তটিই তাকে অমর করে রাখবে ক্রিকেট ইতিহাসে!

    আজ থেকে ঠিক ২৬ বছর আগের দিন সেটি। ১৯৯৪ সালের ৩ জুন। কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচে এজবাস্টনে ওয়ারউইকশায়ারের মুখোমুখি হয়েছিল ডারহাম। লারার ১৮ রানে ওই ক্যাচ ছেড়েছিলেন ডারহামের কিপার স্কট। ক্রিকেটে তো যুগে যুগে কত জনই কত ক্যাচ ছেড়েছে। কিন্তু স্কটের মতো খেসারত দিতে হয়নি আর কাউকে। বেঁচে যাওয়ার পর লারা করেছেন আরও ৪৮৩ রান!

    এমনিতে স্কটকে আলাদা করে মনে রাখার কোনো কারণ নেই। ইংল্যান্ড জাতীয় দলের আশেপাশে আসতে পারেননি কখনও। কাউন্টিতেও দীর্ঘদিন নটিংহ্যামশায়ারে দ্বিতীয় কিপার হয়ে থাকার পর পাড়ি জমিয়েছিলেন ডারহামে। খুব সমৃদ্ধ নয় ক্যারিয়ার। তবু স্কট ক্রিকেট ইতিহাসে আলাদা জায়গা নিয়ে আছেন ওই ক্যাচটি ছাড়ার কারণেই।

    লারার ৫০১ রানের সেই মহাকাব্যিক ইনিংস নিয়ে যতবার আলোচনা হয়, বারবারই ঘুরে ফিরে আসে স্কটের নাম। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে খরুচে ক্যাচ মিস সেটি!

    ম্যাচের দ্বিতীয় দিনে ক্যাচটি ছেড়েছিলেন স্কট। জন মরিসের ডাবল সেঞ্চুরিতে প্রথম ইনিংসে ৫৫৬ রানে ইনিংস ঘোষণা করে ডারহাম। দ্বিতীয় দিনে ব্যাটিংয়ে নেমে ৮ রানে প্রথম উইকেট হারায় ওয়ারউইকশায়ার। তিনে ব্যাট করতে নামেন লারা।

    চা-বিরতির একটু আগে সেই ঘটনা। স্কটের জন্য দুর্ঘটনা। অনেক পরে এক সাক্ষাৎকারে সেই সময়টায় ফিরে তাকিয়েছিলেন স্কট।

    “ প্রচণ্ড বাতাস ছিল সেদিন। মনে আছে, আমি বল হাতে জমাতে একটু ধুঁকছিলাম। গ্লাভসে ঠিকমতো আসছিল না। তার পরও ভালো একটি ক্যাচ নিয়ে ওদের ওপেনারকে ফেরালাম। চা-বিরতির একটু আগে সেই ক্যাচ। এই ধরনের ক্যাচ আমি লাখ লাখ নিয়েছি ক্যারিয়ারে। সোজা ক্যাচ…।”

    কিন্তু কি হয়েছিল তখন? স্কট নিজেও খুঁজে পান না উত্তর।

    “ অনেকে বলেন, আমি বল ঠিকমতো গ্লাভসে জমানোর আগেই উদযাপন শুরু করেছিলাম। আমি আসলে জানি না কী হয়েছিল… আচমকা যেন আমি জমে গেলাম, তার পর বল পড়ে গেল মাটিতে…।”

    হতাশ স্কট তখন বলেছিলেন, “ধুর, এই ব্যাটা মনে হয় আরেকটা সেঞ্চুরি করেই ফেলবে।” আবার কেউ কেউ বলেন, স্লিপ ফিল্ডার এই কথাটি বলেছিলেন স্কটকে। যেটাই হোক, সবার ধারণা ছিল, সেঞ্চুরি আরেকটি আসছে।

    কারণও ছিল। কাউন্টিতে নিজের প্রথম মৌসুমে অবিশ্বাস্য ফর্মে ছিলেন লারা। ওই ম্যাচের আগে ৭ ইনিংসে করেছিলেন ৬টি সেঞ্চুরি। জীবন পাওয়ার পর আরেকটি সেঞ্চুরির মানসিক প্রস্তুতি ছিল তাই একরম নিয়ে ফেলেছিল সবাই। কিন্তু সেই ম্যাচের লারা যেন থামতে ভুলে গিয়েছিলেন! সেঞ্চুরি, ডাবল, ট্রিপল, কোয়াড্রুপল হয়ে লারা পৌঁছে গিয়েছিলেন কুইন্টুপল সেঞ্চুরিতে। খেলেছিলেন প্রথম শ্রেণির ইতিহাসের প্রথম পাঁচশ রানের ইনিংস।

    সেদিন লারার শুরুটায় অবশ্য ছিল বেশ জড়তা। প্রথম বলেই অ্যান্ডারসন কামিন্সকে প্রায় ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফেলেছিলেন। ১২ রানে কামিন্সের বলেই বোল্ড হয়েছিলেন, কিন্তু বলটি ছিল ‘নো।’ এরপর ১৮ রানে ওই ক্যাচ। সাইমন ব্রাউন তখন ডারহামের সেরা পেসার। আগের দুই মৌসুমে ৯৩ উইকেট নিয়েছিলেন। ওই মৌসুমেও তখনও পর্যন্ত নিয়েছিলেন ৬৬ উইকেট। লারার কাঙ্ক্ষিত উইকেটটিও পেতে পারতেন। হয়নি স্কটের কারণেই।

    পরে চা-বিরতির সময় নেটে গিয়ে খানিকটা ব্যাটিং করে নিজেকে ঝালিয়ে নিয়েছিলেন লারা। ব্যস, আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ওই দিন শেষে অপরাজিত ছিলেন ১১১ রানে। ৮ ম্যাচে ৭ সেঞ্চুরি, আরেকটি রেকর্ড।

    ম্যাচের তৃতীয় দিনে বৃষ্টির কারণে খেলা হয়নি এক বলও। পরের দিন ছিল বিরতি। কাউন্টি ক্রিকেটে তখন নিয়ম ছিল অদ্ভূত, সূচি ছিল ঠাসা। ডারহাম-ওয়ারউইকশায়ারের চার দিনের ম্যাচের বিরতির দিন ছিলই এই দুই দলেরই ওয়ানডে কাপের সেমি-ফাইনাল ম্যাচ। সেই ম্যাচে ৬ রানে আউট হয়ে যান লারা। পরদিন বড় দৈর্ঘ্যের ম্যাচের শেষ দিন, ১১১ থেকে আবার শুরু করেন তার অভিযান।
    ছাড়িয়ে যেতে থাকেন একের পর এক মাইলফলক। লাঞ্চের আগের সেশনেই করেন আরও ১৭৪ রান। দিনের শেষ ওভারে ম্যাচের ১ বল বাকি থাকতে মরিসকে বাউন্ডারিতে ছাড়িয়ে যান হানিফ মোহাম্মদের রেকর্ড। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথমবার কেউ স্পর্শ করে পাঁচশর সীমানা। ১৯৫৯ সালে ৪৯৯ রানের ইনিংস খেলে রেকর্ড গড়া পাঁচশ ছোঁয়ার চেষ্টায় রান আউট হয়েছিলেন হানিফ।

    লারা একদিনেই করেছিলেন ২৮০ বলে ৩৯০ রান। রেকর্ড সেটিও। সব মিলিয়ে ৪২৭ বলে ৬২ চার ও ১০ ছক্কায় অপরাজিত ৫০১।

    লারা যখন একের পর এক মাইলফলক পেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন, সতীর্থরা তখন স্কটকে টিপ্পনি কেটে যাচ্ছিলেন। স্রেফ মজা করেই। ম্যাচ এগোচ্ছিল নিশ্চিত ড্রয়ের পথে। তাই স্কটের ওপর তোপ খুব একটা চলেনি!

    ওই মৌসুমেই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে প্রথম সেঞ্চুরি করেছিলেন স্কট, অভিষেকের ১৩ বছর পর! সেবারই সেঞ্চুরি করেন আরেকটি। ১২৯ ম্যাচের ক্যারিয়ারে সেঞ্চুরি ওই দুটিই। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ছেড়েছেন ১৯৯৬ সালে। কিন্তু ওই ক্যাচ মিসের ঘটনা তাকে ছাড়েনি। তাড়া করে আজও।

    সময়ের সঙ্গে সেই ক্যাচ মিসই হয়ে গেছে তার ক্যারিয়ারের প্রতিশব্দ। যে কেউ পরিচয় পেলেই সবকিছুর আগে জিজ্ঞেস করেন সেই ক্যাচ নিয়ে। খেলায়-ধারাভাষ্যে-আলোচনায় ঘুরেফিরে আসে তার নাম। সাংবাদিকরাও বারবার তাকে খোঁজেন কেবল এই একটি কারণেই।

    কে জানে, অভিশপ্ত সেই ক্যাচ মিস হয়তো এখন আর তাকে শুধু যন্ত্রণা নয়, প্রাপ্তির অনুভূতিও দেয়। ওই ক্যাচ না ছাড়লে সাদামাটা ক্যারিয়ারের স্কটকে আলাদা করে মনে রাখত কে!

    স্বপ্নচাষ/আরএস

    Facebook Comments Box
    স্বপ্নচাষ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন  

    বাংলাদেশ সময়: ১১:২৯ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ০৩ জুন ২০২০

    swapnochash24.com |

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
     
    ১০১১১২১৩১৪১৫
    ১৬১৭১৮১৯২০২১২২
    ২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
    ৩০  
    advertisement

    সম্পাদক : এনায়েত করিম

    প্রধান কার্যালয় : ৫৩০ (২য় তলা), দড়িখরবোনা, উপশহর মোড়, রাজশাহী-৬২০২
    ফোন : ০১৫৫৮১৪৫৫২৪ email : sopnochas24@gmail.com

    ©- 2023 স্বপ্নচাষ.কম কর্তৃক সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত।