নাজির উদ্দীন
করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে ঢাকায় পুলিশের আরও এক সদস্য মারা গেছেন। এ নিয়ে করোনায় চার পুলিশ সদস্যের মৃত্যু হলো। সবশেষ মারা যাওয়া পুলিশ সদস্যের নাম নাজির উদ্দীন। তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ শুক্রবার মারা যান।
নাজির উদ্দীন এসআই হিসেবে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের প্রতিরক্ষা শাখায় কর্মরত ছিলেন। তাঁর করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয় গত ২৫ এপ্রিল। তিনি রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
নাজির উদ্দীনের গ্রামের বাড়ি পাবনা জেলার ভাংগুরা থানার কাজিটোলা গ্রামে।
নাজির উদ্দীনের জানাজা আজ শুক্রবার সকালে রাজারবাগে অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে পুলিশের ব্যবস্থাপনায় তাঁর মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। সেখানে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী তাঁকে দাফন করা হবে।
দেশের পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৫৩৬ জন করোনায় আক্রান্ত হন। গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ১১৬ পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হন। ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি) আক্রান্ত সদস্যের সংখ্যা ৩২৯। এ পর্যন্ত যে চারজন মারা গেছেন, তাঁরা সবাই ডিএমপির সদস্য। এর বাইরে দেশের আর কোথাও কোনো পুলিশ সদস্য করোনায় মারা যাননি।
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সারা দেশে পুলিশের ১ হাজার ১১৭ জনকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। আইসোলেশনে আছেন ১৪০ জন। আর করোনায় আক্রান্ত ৫২ জন পুলিশ সদস্যকে বৃহস্পতিবার সুস্থ ঘোষণা করা হয়েছে।
আগে পুলিশের যে তিন সদস্য মারা গেছেন, তাঁরা হলেন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আবদুল খালেক, ট্রাফিক কনস্টেবল আশেক মাহমুদ ও কনস্টেবল জসিম উদ্দিন।
এএসআই আবদুল খালেক মিরপুরে ডিএমপির পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট দক্ষিণ বিভাগে কর্মরত ছিলেন। একই সঙ্গে তিনি একাডেমির মসজিদে ইমামতি করতেন। গত ২৮ এপ্রিল তাঁর শরীরে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হলে তাঁকে আইসোলেশনে রাখা হয়। বৃহস্পতিবার ভোরে আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও তিন মেয়ে রেখে গেছেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার ঝোপখালী গ্রামে।
কনস্টেবল আশেক মাহমুদ ডিএমপির ট্রাফিক উত্তর বিভাগে কর্মরত ছিলেন। জ্বর থাকায় ২৬ এপ্রিল বিএসএমএমইউতে তাঁর করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরের দিন করোনা পরীক্ষায় তাঁর কোভিড-১৯ পজিটিভ আসায় তাঁকে আইসোলেশনে রাখা হয়। তাঁর অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে তিনি মারা যান। তাঁর গ্রামের বাড়ি জামালপুর জেলার মেলান্দহ উপজেলার ইন্দ্রাবাড়ি গ্রামে। তিনি স্ত্রী ও দুই ছেলে রেখে গেছেন। আশেক মাহমুদ রাজারবাগ ট্রাফিক পুলিশের ব্যারাকে থাকতেন।
গত মঙ্গলবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জসিম উদ্দিন। তিনি কনস্টেবল ছিলেন। তাঁর বাড়ি কুমিল্লার বুড়িচংয়ে। ওয়ারী ফাঁড়িতে দায়িত্ব পালনের সময় তিনি করোনায় সংক্রমিত হন।
পুলিশ সদর দপ্তরের অপারেশন শাখা থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, করোনায় আক্রান্ত ইউনিটগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ঢাকা মহানগরীতে। ঢাকায় বৃহস্পতিবার এক দিনেই ৪৮ জন আক্রান্ত হন।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ঢাকা মহানগর পুলিশে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা তাঁদের ভাবিয়ে তুলছে। মহানগর পুলিশের আটটি অপরাধ বিভাগ ছাড়াও পরিবহন, প্রোটেকশন, উন্নয়ন, গোয়েন্দা, স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপসহ ২২টি বিভাগের সদস্যরা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত ব্যক্তিদের তালিকায় ১২ জন নারীও আছেন।
মাঠপর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, পুলিশের যেসব সদস্য রাস্তায় টহল ও তল্লাশি করছেন, তাঁদের ভেতরে করোনা সচেতনতার অভাব রয়েছে। তাঁরা যেমন সামাজিক দূরত্ব মানছেন না, তেমনি নিজেদের সুরক্ষা পোশাক নিয়ে ঢিলেঢালা ভাব। তাঁরা একসঙ্গে দাঁড়িয়ে গল্পগুজব করছেন। আবার এক গাড়িতে পাশাপাশি বসে ব্যারাকে ফিরে যাচ্ছেন। এতে একজন কোনোভাবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে সহজেই তা অন্যকে সংক্রমিত করার আশঙ্কা থাকছে।
ঢাকায় সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ হচ্ছে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে। এখানে দুই শতাধিক পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত। পুলিশ সদস্যরা বলছেন, রাজারবাগে আবাসনব্যবস্থার কারণে তাঁদের মধ্যে করোনার সংক্রমণ হচ্ছে। সেখানে গাদাগাদি করে পুলিশ সদস্যদের থাকতে হচ্ছে। এতে একজন আক্রান্ত হলে তা সহজেই অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। রাজারবাগের পরিস্থিতিকে ভয়াবহ বলছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, অসাবধানতাবশত মানুষের কাছাকাছি চলে যাওয়ায় তাঁরা সংক্রমিত হয়েছেন। দায়িত্ব পালনের সময় পুলিশ সদস্যদের আরও সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, পুলিশ সদস্যদের সুরক্ষায় প্রথম থেকেই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। সেগুলো এখন আরও জোরদার করা হচ্ছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের মুখপাত্র, সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) সোহেল রানা বলেন, জনগণের সুরক্ষা ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে গিয়ে যাঁরা আত্মত্যাগ করেছেন, তাঁদের পাশে পুলিশ বাহিনী সর্বদা রয়েছে। বাহিনীর মনোবল দৃঢ় রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি বলেন, তাঁদের এই ত্যাগ পুলিশ বাহিনী শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।
স্বপ্নচাষ/আরএস
বাংলাদেশ সময়: ২:১৪ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ০১ মে ২০২০
swapnochash24.com | sopnochas24