সংগৃহীত ছবি
করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়েই কাজে যোগ দিচ্ছেন হাজারো পোশাক শ্রমিক। গত ২৫ এপ্রিল থেকে ধাপে ধাপে কাজে যোগ দিচ্ছেন তারা। কারখানা মালিকপক্ষ, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিজিবিএর সম্মতিতে খুলে দেওয়া হচ্ছে কারখানাগুলো।
করোনায় স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকায় শ্রমিকদের স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার দিকটিও মালিকপক্ষকে নিতে হবে বলে মত প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, বিপুল সংখ্যক শ্রমিক কাজে যোগ দেওয়ায় করোনা সংক্রমণের ভয়াবহ ঝুঁকির ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। তাই শ্রমিকদের স্বাস্থ্যগত সমস্ত নিরাপত্তা মালিকপক্ষকেই নিতে হবে।
কারখানা খোলার ব্যাপারে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিজিবিএ বলছে, প্রতিযোগী দেশগুলো ক্রমশই ব্যবসা খুলে দিচ্ছে। তাছাড়া বিশ্বব্যাপী কিছু পোশাকের চাহিদা বাড়ছে। কারখানা চালু করা না হলে এই ব্যবসা অন্য দেশে চলে যাবে।
এ পরিস্থিতে শ্রমিকদের সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করে কাজ করার কথা বলা হয়েছে। তবে শ্রমিকদের স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নিয়মিত করোনা পরীক্ষা ও পোশাক কারখানায় করোনা কিটের সরবরাহ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে পোশাক-শ্রমিকনেতারা।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (ঔষধ প্রশাসন অনুবিভাগ) মো. ইসমাইল হোসেন এনডিসি বলেন, ‘করোনা প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধের উপরই জোর দিতে হচ্ছে বেশি। তাই এ খাতের লোকসানের কথা বিবেচনা করে পোশাক কারখানা চালু করা হলেও পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। অবশ্যই মালিকপক্ষকে উদ্যোগী হয়ে বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবে। না হলে পুরো খাতটিই ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে।’
গাজীপুরের গার্মেন্টস কর্মী মোহাম্মদ মেহেদী হোসেন বলেন, ‘ঝুঁকি নিয়েই কাজে যেতে হচ্ছে আমাদের। কিন্তু কাজ না করলে চাকরি হারানোরও তো ঝুঁকি রয়েছে। আমাদের গার্মেন্টসে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, হান্ড স্যানিটাইজার সব কিছুরই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবুও সবার মনেই আতঙ্ক বিরাজ করছে।’
বাংলাদেশ নীটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) সভাপতি ও সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে অনেকদিন ধরেই গার্মেন্টস -কল কারখানা বন্ধ ছিল। এতে দেশকে অর্থনৈতিক দিক থেকে অনেক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। তাই এই লকডাউনের মধ্যে আমাদের সল্প পরিসরে কারখানা খুলতে হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা গতকাল (২৭ এপ্রিল) জানিয়েছিলাম, এখন সল্প পরিসরে কারখানা খুলব। আশপাশে যে সকল শ্রমিকরা আছেন তাদেরকে দিয়েই এখন কারখানা চালু করব। এখন আপাতত ১৫৮টি ফ্যাক্টরি খোলা থাকবে। পরিস্থিতির দিক বিবেচনায় রেখে পর্যায়ক্রমে আরো চালু করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা শ্রমিকদের বলেছি, তারা যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজে আসেন। এছাড়া আমরা ফ্যাক্টরির মালিকদের বলেছি, কারখানায় ঢোকার সময় হাত ধোয়ার ব্যবস্থা, ব্লিচিং মিশ্রিত পানিতে জুতা ভিজিয়ে প্রবেশ করার ব্যবস্থা রাখতে।’
বিজিএমইএর পরিচালক ও গার্মেন্টস মালিক বলেন, ‘‘কারখানাগুলো প্রাথমিক পর্যায়ে তাদের ফিনিশিং, স্যাম্পল ও সুইং বিভাগগুলো আংশিকভাবে খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। তাছাড়া সামাজিক নিরাপদ দূরত্ব নিশ্চিত করার জন্য, শ্রমিকদের কাজের ক্ষেত্রে একটি শিফটিং ব্যবস্থা অনুসরণ করতে মালিকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
‘শ্রমিকদের কারো করোনাভাইরাস উপসর্গ দেখা দিলে তাদেরকে ছুটি দেওয়ার জন্য মালিকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। এছাড়াও করোনার লক্ষণ দেখা দেওয়ার পর যারা সেল্ফ আইসোলেশনে গেছেন- তাদের বেতনভোগের ব্যবস্থাও রাখার কথা বলা হয়েছে।”
এদিকে গতকাল রাতে বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক কারখানা খোলার বিষয়টি অবহিত করে শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন।
ওই চিঠিতে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশ ধীরে ধীরে অর্থনৈতিক কার্যক্রম চালু করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সংগঠনের সদস্যভুক্ত কারখানাগুলো পর্যায়ক্রমে খোলা হচ্ছে।
ওই চিঠি পাওয়ার পর শ্রম মন্ত্রণালয়ও তাৎক্ষণিক একটি চিটি ইস্যু করেছে। এতে সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানা চালু করার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়।
স্বপ্নচাষ/আরএস
বাংলাদেশ সময়: ৭:৫৯ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৮ এপ্রিল ২০২০
swapnochash24.com | Anaet Karim