ছবি: সংগৃহীত
`সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি’ হলেও জীবনকে সুন্দরভাবে রাঙাতে ব্যস্ত সময় পার করেন সবাই। ফলে সময় বাঁচাতে হাঁসফাঁস করেন অনেকেই। তবুও রান্নার পেছনে অনেক সময় ব্যয় হয়। তাই ব্যস্ত মানুষদের কথা চিন্তা করে শীতকালীন শাক কেটে, ধুয়ে পুরো প্রস্তুত করে বিক্রি করা হচ্ছে রাজশাহীতে। নগরীর সিএনবির মোড়ে নানী শাশুড়ি মানোয়ারা বেগমকে সঙ্গে নিয়ে খেসারি, বুট ও বথুয়ার শাক বিক্রি করছেন চম্পা বেগম। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও টাটকা হওয়ায় ভ্রাম্যমাণ এই রেডিমেড শাকের দোকানে ভিড় করছেন ক্রেতারা। ফলে অভিনব এই পদ্ধতিতে শাক বিক্রি করে ভালোভাবেই চলছে তাদের সংসার।
এখানে শাক কিনতে আসা রাজশাহী নগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকার বাসিন্দা স্নেহ লতা বলেন, শাক রান্নার চেয়ে কাটাকুটি করা বেশি কষ্টের। আবার সময়ও নষ্ট হয় অনেক। ফলে পছন্দের হলেও শাক খুব একটা খাওয়া হয় না। তবে এখানে টাটকা শাক অত্যন্ত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। তাই খেশাড়ি ও বুটের শাক পৃথকভাবে এক কেজি কিনলাম। এগুলো এখন শুধু লবণ, মরিচ, পেঁয়াজ দিলেই রান্না হয়ে যাবে।
এদিকে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক কর্মকর্তা লুৎফর রহমান নগরীর তালাইমারী থেকে যাতায়াত বাবদ ৩০ টাকা খরচ করে এখানে এক কেজি শাক কিনতে আসেন। তিনি বলেন, এই শাকগুলো আমার অত্যন্ত পছন্দের। কিন্তু সব জায়গায় পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও বাসায় কাটাকুটি করতে খুব ঝামেলা মনে করে। কিন্তু এখানে কেটে ধুয়ে পুরো প্রস্তুত করে বিক্রি করা হয়। তাই আসতে যেতে অটোরিকশায় ৩০ টাকা খরচ হলেও এখান থেকেই শাক কিনে নিয়ে যাই।
শুধু লুৎফর রহমান ও স্নেহ লতাই নয়, দেশি শাকপ্রেমী অসংখ্য ক্রেতা ভ্রাম্যমাণ এই শাকের দোকানে ভিড় করছেন।
এখানে বিক্রি হওয়া তিন পদের শাকই এক কেজি করে কিনলেন নগরীর বর্নালী এলাকার হাসিবুল ইসলাম। পেশায় অটোচালক এই ব্যক্তি বলেন, বর্তমানে মাছ-মাংসের চেয়ে শাক-সবজির প্রতি মানুষের আগ্রহ বেশি। কারণ বর্তমানে টাকা থাকলেই মাছ-মাংস পাওয়া যায়। কিন্তু শাক-সবজি পাওয়া যায় না। ঢাকাতে সতেজ শাক পাওয়া আরও দুস্কর। দুই দিন পর ঢাকায় ছোট মেয়ের বাসায় যাবো। তাই তাদের জন্য এ শাক নিয়ে যাবো বলে কিনলাম।
জানা যায়, রাজশাহীর পদ্মার পাড় সংলগ্ন শিমলা পার্কের নিচে রবিউল নামে স্থানীয় ব্যক্তি এই শাক চাষ করে বিক্রি করছেন। তার কাছ থেকে প্রতিদিন ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে কিনে এনে এখানে কেটে-ধুয়ে ৮০-১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন মনোয়ারা বেগম ও তার নাতবউ চম্পা বেগম। দিনে গড়ে ১৪ থেকে ১৬ কেজি পর্যন্ত বিক্রি করেন তারা। এতে প্রতিদিন গড়ে ৩০০-৪০০ টাকা লাভ হয়।
ষাটোর্ধ্ব মনোয়ারা বেগমের বাড়ি রাজশাহী নগরীর শ্রীরামপুর বাঁধের নিচে। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন ৬-৮ কেজি শাক নিয়ে আসি। সকালে অন্য কাজের পর বিকেলে এই কাজ করি।’
মানোয়ারার পাশে বসে শাক বিক্রি করছিলেন তার নাতবউ চম্পা বেগম। তিনিও প্রতিদিন একই পরিমাণ শাক বিক্রি করেন। চম্পা বলেন, ‘বছরে অন্য সময় মানুষের বাসাবাড়িতে কাজ করি। তবে শীতকালে শাক বিক্রি করেই ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা প্রতিদিন আয় হয়। তাই এই সময়ে বাসাবাড়ির কাজ বন্ধ রেখে সকাল থেকে এখানে শাক বিক্রি করি। এতে চারজনের সংসার খুব ভালোভাবেই চলে যায়।’
স্বপ্নচাষ/এসএস
বাংলাদেশ সময়: ১২:০৪ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৭ জানুয়ারি ২০২৩
swapnochash24.com | sopnochas24