মহামারি করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দেশজুড়ে লকডাউন চলছে। এতে বরগুনায় ক্ষেতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কৃষকের তরমুজ। কেননা, লকডাউনে পরিবহন বন্ধ থাকায় একদিকে পাইকাররা আসছেন না, অন্যদিকে কৃষকরা কোথাও তরমুজ সরবরাহও করতে পারছেন না।
এর উপর এসে ভর করেছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ইতোমধ্যে বৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টি আরও ভয় ধরিয়ে দিয়েছে কৃষকের মনে। তবে এ প্রতিকূল অবস্থায় তরমুজ বিক্রিতে চাষিদের সম্ভব সব সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে কৃষি বিভাগ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্র জানায়, এবারের মৌসুমে বরগুনা সদর উপজেলার বালিয়াতলী ইউনিয়ন, নলটোনা, বরগুনা সদর ও কেওড়াবুনিয়া ইউনিয়নে মোট ৭শ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে।
কৃষকদের কাছ থেকে জানা যায়, প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে আমন ফসল নষ্ট হওয়ায় কৃষকরা সামান্য পুঁজি নিয়ে বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ করে এ মৌসুমে তরমুজের চাষ করে। আশানুরূপ ফলন হলেও পরিবহনের অভাবে তরমুজ চালান করতে পারছেন না কৃষক। কৃষিপণ্যবাহী পরিবহন সরকারি নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত হলেও চলমান প্রেক্ষাপটে ভয়ে পরিবহন নিয়ে রাস্তায় নামতে দিচ্ছেন না পরিবহন মালিকরা। ফলে পরিবহন অভাবে পাইকাররা আসছেন না। তাই ক্ষেতের তরমুজ ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে।
সরেজমিনে সদর উপজেলার এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের মনসাতলী, রক্ষাচন্ডি, বানাই, লতাকাটাসহ বেশ কিছু এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ক্ষেতে তরমুজ স্তপ করে রাখা হয়েছে। এ মাসের শুরুর দিকে ও সম্প্রতি শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ের আঘাতে ক্ষেতের বেশ কিছু তরমুজে পচন ধরেছে। বছরের অন্যান্য সময়ে দূর দূরান্তের পাইকার ও শ্রমিকদের পদচারণায় এসব এলাকা মুখর থাকলেও এখন চাষিরা ছাড়া কেউ নেই। স্থানীয় বাজারে কিছু তরমুজ বিক্রি হচ্ছে কিন্তু তা একেবারেই যৎসামান্য।
নশু মিয়া, মনির, আব্বাছ, রহমান খা, হারুন মিয়াসহ বেশ কয়েকজন তরমুজ চাষির সাথে কথা হয়।
নশু মিয়া বললেন, তার যে পুঁজি ছিলো তার সাথে একটি বে-সরকারি সংস্থা থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে এক একর ৮০ শতাংশ জমিতে তরমুজের আবাদ করেছেন। এ বছর ফলন ভালো হলেও করোনার প্রভাবে পরিবহন না পাওয়ায় পাইকার আসছে না। তার ভয়, পরিপক্ক তরমুজ যদি সঠিক সময়ে চালান করতে না পারলে ক্ষেতের ফসল ক্ষেতেই নষ্ট হবে। তাহলে পরিবার পরিজন নিয়ে পথে বসতে হবে। একই অবস্থা অন্যসব চাষিদেরও।
বালিয়াতলী তরমুজ চাষি সমবায় সমিতির সভাপতি আবদুল হালিম বলেন, ‘এসময় জরুরি ভিত্তিতে সরকারিভাবে এই পচনশীল পণ্য পরিবহনের উদ্যোগ গ্রহণ না করলে কয়েকশ কৃষক নিঃস্ব হয়ে যাবে। সহায় সম্বল হারিয়ে পথে বসতে হবে সবার। সরকারের কৃষি বিভাগ বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ না করলে আমাদের অবস্থা বেশ খারাপ হয়ে যাবে।’
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এবার তরমুজের ফলন খুব ভালো হয়েছে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে পণ্যবাহী পরিবহন সরকারি নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত হলেও শ্রমিকরা ভয়ে ট্রাক নিয়ে রাস্তায় নামছেন না। তবে পাইকাররা ট্রাকের ব্যবস্থা করতে পারলে কৃষি অফিস থেকে প্রত্যয়ন দেয়া হবে, যাতে করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষক তার পণ্য চালান করতে পারেন।’
স্বপ্নচাষ/আরএস
বাংলাদেশ সময়: ১০:৩৩ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৩ এপ্রিল ২০২০
swapnochash24.com | Anaet Karim