রাতের ঘন অন্ধকার, সেই সঙ্গে নেমেছে মুষলধারে বৃষ্টি। যশোর শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরের প্রত্যন্ত গ্রাম হৈবৎপুর ইউনিয়নের বেনেয়ালির বাসিন্দারা নিচ্ছিলেন ঘুমের প্রস্তুতি। এমন সময় ঘরের দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে ভয়ে লাফিয়ে ওঠেন কেউ কেউ। দরজা খুলতেই বাইরে বৃষ্টিতে ভিজে দাঁড়িয়ে থাকা সেনাসদস্যরা প্যাকেটটা এগিয়ে দিলে বললেন, ‘এগুলো আপনাদের জন্য আনা উপহার।’ এভাবেই ওই গ্রামের কয়েকশ’পরিবারের বাড়িতে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেন তারা।
নিজেদের রেশন বাঁচিয়ে যশোরে অসহায় নিম্নবিত্ত পরিবারের মাঝে খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে সেনাবাহিনীর যশোর ৫৫ পদাতিক ডিভিশনের সদস্যরা। রাতের আঁধারে করোনার প্রভাবে কর্মহীন হয়ে পড়া এসব পরিবারের বাড়িতে গিয়ে সেনাসদস্যরা পৌঁছে দিচ্ছেন চাল-ডাল-তেলসহ অন্যান্য সামগ্রী। শুক্রবার রাতে তুমুল বৃষ্টিতে ভিজেও মানবিক এই কর্মসূচি চালিয়েছেন তারা।
কোথাও ধর্ণা না দিয়েই ঘরে বসে খাদ্য সহায়তা পাওয়ায় দারুণ খুশি করোনার প্রভাবে কর্মহীন নিম্নআয়ের মানুষেরা। বেনেয়ালি গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল খালেক পেশায় রংমিস্ত্রি। সেনাবাহিনীর দেওয়া ত্রাণ হাতে পেয়ে বললেন, একমাসের অধিকসময় কাজ নেই, কাছে টাকাও নেই। কিন্তু মানুষের কাছে হাত পাতাও তার জন্য কঠিন কাজ। ফলে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কষ্টে দিন কাটছিল। এমন পরিস্থিতিতে এই সহায়তা তাদের জন্য অনেক বড় পাওয়া।
সেনাবাহিনির যশোর ৫৫ পদাতিক ডিভিশনের কর্মকর্তা লে. কর্নেল নেয়ামুল হক জানান, করোনার প্রভাবে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষেরা যেন অভূক্ত না থাকে; সেজন্যই সেনাবাহিনী এ উদ্যোগ নিয়েছে। এখনও খাদ্য সহায়তার তালিকায় আসেননি গ্রামাঞ্চলের এমন পরিবারকে চিহ্নিত করে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে খাদ্যসামগ্রী। সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করতে রাতে খাদ্যসামগ্রী বিতরণের কৌশল নেয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এ মাসের গোড়াতে শুরু হয়েছে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ। প্রতি সপ্তাহে একহাজার পরিবারকে এই সহায়তা দিচ্ছেন। সেনাসদস্যদের রেশন ও কর্মকর্তাদের আর্থিক সহায়তায় চলমান এ খাদ্য সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত।
স্বপ্নচাষ/আরএস
বাংলাদেশ সময়: ৯:৪১ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২০
swapnochash24.com | Anaet Karim