• রবিবার ১লা অক্টোবর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ ১৬ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

    শিরোনাম

    স্বপ্নচাষ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন  

    চাপা কষ্ট, দুশ্চিন্তায় হাসপাতালের ঈদ

    স্বপ্নচাষ ডেস্ক

    ২৫ মে ২০২০ ৬:২০ অপরাহ্ণ

    চাপা কষ্ট, দুশ্চিন্তায় হাসপাতালের ঈদ

    ঈদের দিনে হাসপাতালগুলোতে সাধারণত সবার জন্য বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করা হয়; রোগী, স্বজন ও স্বাস্থ্যকর্মীরা মিলেমিশে দিনটি কাটান। কিন্তু করোনাভাইরাসের মহামারী অন্য সব কিছুর মতো এবারের ঈদের দিনের হাসপাতালের দৃশ্যপটেও এনেছে পরিবর্তন ।

    কোভিড-১৯ চিকিৎসায় নিবেদিত হাসপাতালগুলোতে রোগীরা রয়েছেন আলাদা; স্বাস্থ্যকর্মীরাও সুরক্ষা বিধি মেনে তাদের সেবায় নিয়োজিত আছেন। আক্রান্তদের মতো স্বাস্থ্যকর্মীরাও পরিবার থেকে দূরে রয়েছেন; সবার জন্যই বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করা হলেও সবাই একাকী।

    ঈদের আগের দিন করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন দক্ষিণখান এলাকার আমিনুল ইসলাম।

    সোমবার তিনি বলেন, “ঈদের দিন পরিবার থেকে দূরে থাকলে তো খারাপ লাগবেই, দুশ্চিন্তাও হচ্ছে। অন্য রোগ নিয়ে হাসপাতালে থাকলেও পরিবারের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করা যায়, কিন্তু এই রোগ তো সবার কাছ থেকেই দূরে সরিয়ে দিল।”

    কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালের ল্যাবে দুই মাস ধরে কাজ করছেন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ইব্রাহিম। কোভিড-১৯ সংক্রমণ শুরুর পর তাকে এখানে বদলি করা হয়।

    তিনি বলেন, স্ত্রী, দুই সন্তান, বৃদ্ধ বাবা-মাকে বাড়িতে রেখে এসেছেন তিনি। ঢাকায় আসার পরই তার সন্তানের জন্ম হয়েছে। মাঝখানে ছুটিতে একবার বাড়ি গিয়ে সন্তানকে দেখে এসেছেন তিনি।

    ঈদ কেমন কাটল জানতে চাইলে আবেগী হয়ে ইব্রাহিম বলেন, “ছোট বাচ্চা, স্ত্রী সন্তান রেখে ডিউটি করতে কেমন লাগে বোঝেনই তো! বাড়িতে মা অসুস্থ, বাবা বয়স্ক মানুষ। আমি ছাড়া তো তাদের কেউ নাই।

    “এই সময় আমি বাড়ির বাইরে পড়ে আছি, খারাপ তো লাগে খুব। চাপা কষ্ট আছে তারপরও কোভিড-১৯ পেশেন্টের জন্য কাজ করছি। মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারছি- এটাও আনন্দের, গর্বের বিষয়।”

    কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালের সমন্বয়ক ডা. শিহাব উদ্দিন জানান, ঈদের দিন ১০৪ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। রোগী, চিকিৎসক, নার্সসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য দুপুরে এবং রাতে বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

    তিনি বলেন, “অন্যান্য ঈদে তো চিকিৎসকদের রোস্টার অনুযায়ী কাজ করতে হয়। কিন্তু এবার সেই সুযোগ নেই। সবারই রোস্টার বাতিল করা হয়েছে। ডিউটি করছি সবাই। ঈদের জন্য ভালো খাবারের ব্যবস্থা করেছি। এছাড়া স্বাস্থ্যকর্মী এবং রোগী সবার জন্য কিছু উপহারের ব্যবস্থা করেছি।”

    কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের আইইসিইউতে দায়িত্বরত এক চিকিৎসক বলেন, ঈদের দিন সাধারণত হাসপাতাল ফাঁকা থাকে, একেবারে খারাপ অবস্থা না হলে মানুষ হাসপাতালে আসে না। কিন্তু করোনাভাইরাসের মহামারী সব দিনকে এক করে দিয়েছে।

    “অন্যান্য দিনের সঙ্গে আজকের ঈদের দিনের কোনো পার্থক্য খুঁজে পাচ্ছি না। আজকে শুধু চিকিৎসক ও রোগীদের কিছু ভালো খাবার দাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।”

    কোভিড-১৯ চিকিৎসায় নিবেদিত নরসিংদী ১০০ শয্যার জেলা হাসপাতালে ঈদের দিন ১৫ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। তাদের একজন নরসিংদী শহরের ভেলানগর এলাকার পারভীন বেগম। কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে তিনি প্রায় এক মাস ধরে হাসপাতালে আছেন তিনি।

    তিনি বলেন, “ঈদের দিন আমাকেই তো সব সামলাতে হয়। কিন্তু এবার আমিই বাড়ির বাইরে। এমন অবস্থা কারও সঙ্গে দেখা করারও সুযোগ নেই।

    “আমি হাসপাতালে কিন্তু মন পড়ে আছে বাড়িতে- এটা খুব কষ্টের বিষয়। এমন ঈদের দিন আসবে কখনো ভাবতেই পারিনি।”

    ঈদের দিন হাসপাতালে বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নরসিংদী ১০০ শয্যা জেলা হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক এএনএম মিজানুর রহমান।

    মিজানুর বলেন, “কোভিড-১৯ রোগীরা শুধু ঠাণ্ডা ছাড়াসব খাবারই খেতে পারেন । এজন্য আমরা চেষ্টা করছি ভালো খাবার দিতে। জেলা প্রশাসন থেকে খাবারের পাশাপাশি কিছু উপহার দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকেও খাবার দেওয়া হচ্ছে রোগীদের।”

    ঈদের দিন নোয়াখালী সদর হাসপাতালের কোভিড-১৯ ওয়ার্ডে ২৩ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। তাদের একজন একটি বেসরকারি টেলিভিশনের ভিডিও সাংবাদিক জয় ভূঁইয়া। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৯ মে।

    তিনি বলেন, “গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে চেষ্টা করি কীভাবে মানুষকে তথ্য দেওয়া যায়। প্রতি ঈদের দিন সবার আগে আমরা দৌড়াই। ঈদের নামাজের ফুটেজ নেওয়ার চেষ্টা করি, সারাদিন কর্মব্যস্ত দিন কাটাই।

    “কিন্তু এই ঈদের দিন আমি মৃত্যুশয্যায়। অবস্থা খারাপ ছিল, তবে এখন একটু ভালো লাগছে। পরিবারের বাকিদের জন্যও খুব টেনশন হচ্ছে।”

    রোববার পর্যন্ত সারা দেশে ৩৩ হাজার ৬১০ জন কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, মারা গেছেন ৪৮০ জন।

    বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশনের হিসাবে, রোববার পর্যন্ত ৮৩০ জন চিকিৎসক কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন। নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মী মিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা ১৭শর বেশি বলে জানিয়েছেন বিডিএফ।

    Facebook Comments Box
    স্বপ্নচাষ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন  

    বাংলাদেশ সময়: ৬:২০ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২৫ মে ২০২০

    swapnochash24.com |

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
     
    ১০১১১২১৩
    ১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
    ২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
    ২৮২৯৩০৩১  
    advertisement

    সম্পাদক : এনায়েত করিম

    প্রধান কার্যালয় : ৫৩০ (২য় তলা), দড়িখরবোনা, উপশহর মোড়, রাজশাহী-৬২০২
    ফোন : ০১৫৫৮১৪৫৫২৪ email : sopnochas24@gmail.com

    ©- 2023 স্বপ্নচাষ.কম কর্তৃক সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত।