ফাইল ছবি
করোনাভাইরাসের উপস্থিতি ঘোষণা ও লকডাউন শুরুর পর ত্রাণ সহায়তা প্রদানের জন্য ব্যাপক তোড়জোড় দেখা গেলেও এখন সে ব্যাপকতা নেই; কোথাও কোথাও রয়েছে বিছিন্নভাবে, অল্প পরিসরে। শুরুর দিকে বিভিন্ন ব্যক্তি, সামাজিক সংগঠন ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা নিজেদের অর্থে ত্রাণ বিতরণ করেছেন। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ভাসমান লোকদের মাঝে রান্না করা খাবারও বিতরণ করতে দেখা গেছে।
এখন ত্রাণের আশায় সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা ছিন্নমূল মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কেউ ত্রাণ নিয়ে আসে না। দিন-রাত রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকে শূন্যহাতে ফিরতে হয়।’ অন্যদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পরিবারভিত্তিক যে মানবিক সহায়তা কার্ডের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণের কথা ঘোষণা করা হয়েছে, তা তালিকা তৈরির মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে। কোনো জেলার তালিকাই শেষ হয়নি। তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পর ত্রাণ দেওয়া শুরু হবে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন জেলার প্রশাসকরা। তবে নির্দিষ্ট করে দিনক্ষণের কথা বলতে পারেননি কেউ।
একই অবস্থা ঢাকাসহ সিটি করপোরেশনগুলোতেও। ত্রাণ ও সহায়তার দাবিতে দিন দিন সড়কে ভাসমান লোকের সংখ্যা বাড়ছে। কোনো গাড়ি থামলেই ত্রাণের আশায় হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন তাঁরা। ত্রাণ ও সহায়তার দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবারও রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের শ্রমিকরা। ব্যক্তি উদ্যোগে ত্রাণ সহায়তায় ভাটা পড়া ও উপকারভোগীদের সরকারি তালিকা চূড়ান্ত না হওয়ায় ত্রাণের জন্য হাহাকার বাড়ছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বছরব্যাপী ওএমএস, ভিজিডি ও ভিজিএফে তিন ধরনের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির মাধ্যমে ৭৭ লাখ ৯ হাজার উপকারভোগীকে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। করোনার কারণে এ খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে আরো ৫০ লাখ উপকারভোগীকে যোগ করা হয়েছে। এখন মোট উপকারভোগীর সংখ্যা দাঁড়াবে এক কোটি ২৭ লাখ ৯ হাজার পরিবার। প্রতি পরিবারে চারজন করে সদস্য ধরে মোট ছয় কোটি মানুষকে উপকারভোগী হিসেবে ধরা হয়েছে। খাদ্য বিতরণে দুর্নীতি রোধ করার জন্য এই সোয়া কোটি পরিবারকে কিউআর (কুইক রেসপন্স) কার্ডের মাধ্যমে সহায়তা দেওয়া হবে যাতে মধ্যস্বত্বভোগীরা কোনো দুর্নীতি না করতে পারে।
দেশে করোনাভাইরাস উপস্থিতি ঘোষিত হওয়ার পর দরিদ্র জনগোষ্ঠী এ পর্যন্ত ব্যক্তিগত উদ্যোগ, সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও জেলাগুলোতে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে এবং প্রধানমন্ত্রীর উপহার—এই তিন ধরনের ত্রাণ পেয়েছে। সরকার প্রযুক্তি ব্যবহার করে সোয়া কোটি পরিবারকে নতুনভাবে তালিকা করে দুই ধরনের কার্ড দেওয়া হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে—ওএমএস ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মানবিক সহায়তা কার্ড। এই দুই ধরনের কর্মসূচির উপকারভোগীর তালিকা তৈরির কাজ চলছে। একযোগে কাজ করছে ছয়টি মন্ত্রণালয়ের মাঠ প্রশাসন। তালিকা চূড়ান্ত হলে এগুলো জমা পড়বে জেলা প্রশাসনের কাছে। জেলা প্রশাসন তালিকা প্রেরণ করবে খাদ্য ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে। কিউআর কার্ড সম্পন্ন হলে জেলা প্রশাসন তা পৌঁছে দেবে তালিকাভুক্ত উপকারভোগীদের কাছে।
সিটি করপোরেশন এলাকায় ওয়ার্ড কাউন্সিলররা তালিকা তৈরি করে তা জমা দেবেন সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে। তিনি ওএমএস তালিকা জমা দেবেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ে এবং মানবিক সহায়তা কার্ডের তালিকা জমা দেবেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে। এরপর ডিজিটাল পদ্ধতির এই কার্ড পৌঁছে দেওয়া হবে তালিকাভুক্ত উপকারভোগীদের কাছে। ডিজিটাল পদ্ধতির এ কিউআর কার্ড প্রাপ্যদের তালিকার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোনো কোনো জেলা ও সিটি করপোরেশনে তালিকা চূড়ান্ত হয়ে জমা পড়েছে, কোনো কোনো জেলায় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা তালিকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে জমা দিয়েছেন।
উপকারভোগীদের তালিকা তৈরির বিষয়ে ঝালকাঠি সদর উপজেলার গাভা রামচন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম মওলা মাসুম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি উপকারভোগীদের তালিকা তৈরি করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে জমা দিয়েছি।’ তালিকার বিষয়ে ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘তালিকা তৈরির কাজ প্রায় শেষ, এটা চূড়ান্ত হলেই তালিকাভুক্তরা ত্রাণ সহায়তা পেতে শুরু করবেন।’ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৫১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ শরিফুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমার ওয়ার্ডের তালিকা আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে জমা দিয়েছি। তবে কবে নাগাদ কার্ডের মাধ্যমে ত্রাণ আসা শুরু হবে সে বিষয়ে এখনো কিছু জানি না।’
স্বপ্নচাষ/আরএস
বাংলাদেশ সময়: ২:২৪ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০৮ মে ২০২০
swapnochash24.com | sopnochas24