ফাইল ছবি
সরকারের বেঁধে দেয়া সময় অনুযায়ী গেল ২৬ এপ্রিল থেকে কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি বোরো ধান ক্রয়ের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ বছর ২৬ টাকা কেজি দরে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করা হবে, যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় সাড়ে ২১ টাকা।
সরকার এবছর রাজশাহী বিভাগ থেকে ধান ক্রয়ের যে লক্ষমাত্রা হাতে নিয়েছে তা এই বিভাগের মোট উৎপাদিত লক্ষমাত্রার মাত্র ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ।
এদিকে নানা জটিলতায় এখন পর্যন্ত এই অঞ্চলে ধান ক্রয়ের কর্মসূচি শুরু করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট দপ্তর।
রাজশাহী বিভাগের আটটি জেলার কৃষকদের তালিকা এখন পর্যন্ত প্রস্তুত করতে পারেনি কৃষি অধিদপ্তর। আর স্থানীয় কৃষকদের তালিকা হাতে না পাওয়ায় বোরোধান ক্রয় কার্যক্রম শুরুই করতে পারেনি খাদ্য বিভাগ। কবে নাগাদ এই কর্যক্রম শুরু করা যাবে তার সঠিক দিনখন বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা।
তবে কৃষি ও খাদ্য অধিদপ্তরের দাবি, রাজশাহী অঞ্চলে জমি থেকে ধান উঠতে এখনো অন্তত ১০ থেকে ১৫ দিন বাকি। আর এর পারই প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে শুরু হবে কৃষকদের তালিকা প্রস্তুতের কার্যক্রম। যা পরবর্তিতে স্থানীয় খাদ্য বিভাগকে দেয়া হবে। যাচাই বাছাই শেষে তার পর শুরু হবে ধান ক্রয়ের কর্মসূচি। এহিসেবে ধান ক্রয়ের মূল কার্যক্রম শুরু হতে সময় লাগবে অন্তত এক মাস।
আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় রাজশাহীর দেয়া তথ্য মতে, দেশব্যাপী কৃষকদের কাছ থেকে বোরোধান ক্রয়ের কার্যক্রম শুরু হয়েছে গত ২৬ এপ্রিল। চারমাস ব্যাপী এই কার্যক্রম চলবে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত।
এ বছর রাজশাহী বিভাগের কৃষকদের থেকে ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ২ হাজার ৬৬৬ মেট্রিক টন। যার মধ্যে রাজশাহী জেলা থেকে ৮ হাজার ৫০৪ মে.টন, নাটোর থেকে ৮ হাজার ৯৪ মে.টন, নওগাঁ থেকে ২৩ হাজার ২৩২ মে.টন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ৪হাজার ২৮৪ মে.টন, পাবনা থেকে ৪হাজার ৯৬০ মে.টন, সিরাজগঞ্জ থেকে ১৮হাজার ৭০১ মেটন, বগুড়া থেকে ২৫ হাজার ৪৪ মে.টন এবং জয়পুরহাট থেকে ৯ হাজার ৮৪৭ মে.টন ধান ক্রয় করা হবে।
রাজশাহী বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য মতে, এই বিভাগে এবছর তিন লাখ ৫৩ হাজার ৩৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। যাথেকে ১৯ লাখ ৫২ হাজার ৬০০ মে.টন ধান উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ধরা রয়েছে। আর এই অঞ্চলে কৃষক রয়েছে প্রায় ১০ লাখ।
এই অঞ্চল থেকে সরকারের ধান ক্রয়ের লক্ষমাত্র ১ লাখ ২ হাজার ৬৬৬ মে.টন। যা ধানের উৎপাদিত লক্ষমাত্রার মাত্র সাড়ে ৫দশমিক ২৫ শতাংশ। ফলে মোট উৎপাদিত ধানের একটা বড় অংশই রয়ে যাবে কৃষকদের হাতে।
রাজশাহীর পবা উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা জানান, কৃষি অধিদপ্তরের দেয়া তালিকা অনুযায়ী কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কিনবে খাদ্য অধিদপ্তর। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে ও জমিতে এখনো ধান থাকায় এখনো কৃষকদের নামের তালিকা তৈরির কাজ শুরু করা যায়নি। আশা করা যাচ্ছে আগামী ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে জমির ধান কাটা শুরু হবে।
এর পর স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দেয়া নামের তালিকা ও মাঠ পর্যায়ের সরকারি কৃষি কর্মীদের দেয়া তালিকা থেকে প্রকৃত কৃষকদের নাম তালিকাভুক্ত করা হবে।
পবা উপজেলার ইউএনও এবং এই উপজেলার খাদ্য ক্রয় কমিটির সভাপতি শাহাদাত হোসেন জানান, মাঠ পর্যায় থেকে প্রকৃত কৃষকদের তালিকা হাতে পেলে উপজেলা খাদ্য ক্রয় কমিটিতে যাচাই বাছাই শেষে তা চূড়ান্ত করা হবে। আর এই তালিকা থেকে সরকারের কাছে ধান বিক্রয়ে আগ্রহী কৃষদের নাম লাটারির মাধ্যমে বাছাই করা হবে ও তাদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত ন্যয্য মূল্যে ধান ক্রয় করা হবে।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামছুল হক জানান, অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় রাজশাহীতে বোরো ধান কৃষকের ঘরে ওঠে খানিকটা দেরিতে। তাই দেরি হচ্ছে ধান সংগ্রহ কার্যক্রম।
রাজশাহী আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক রায়হানুল কবীর বলেন, আগামী দুই এক সম্পাহের মধ্যেই ধান ক্রয়ের কর্মসূচি শুরু করা হবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকদের তালিকা প্রস্তুত করে থাকে। তাদের দেয়া কৃষকদের তালিকা হাতে আসলেই আমরা এই কর্মসূচি শুরু করতে পাবো। আগামী চার মাস ধরে এই কর্মসূচি চলবে।
কৃষকদের উৎপাদিত ধানের ন্যয্য মূল নিশ্চিতের পাশাপাশি ধান উৎপদনে উৎসাহিত করতে সরকার প্রতিবছর কৃষকদের থেকে সরাসরি ধান ক্রয় করে আসছে। প্রতি বস্তা (৪০ কেজি) ধানের বর্তমান বাজার মূল্য ৭৮০ থেকে ৮৫০ টাকা। তবে কৃষকদের স্বার্থে বস্তা প্রতি ২০০ টাকার বেশি ভর্তুকি দিয়ে সরকার কিনছে ১ হাজর ৮০ টাকা দরে।
রাজশাহী বিভাগের কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনার পাশাপাশি স্থানীয় মিলারদের কাছ থেকে সিদ্ধ ও আতপ চাল কেনা হবে ২ লাখ ৬২ হাজার ৭৩১ মে.টন। ৭ মে থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত চাল ক্রয়ের কার্যক্রম চালু থাকবে। এবিষয়ে ৩০ এপ্রিল সংশ্লিষ্ট মিলারদের সাথে চুক্তি সম্পাদিত হবার কথা।
স্বপ্নচাষ/আরএস
বাংলাদেশ সময়: ৪:৫৬ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০১ মে ২০২০
swapnochash24.com | Anaet Karim