• শুক্রবার ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ ৭ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

    শিরোনাম

    স্বপ্নচাষ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন  

    বলিউডে খানদের রাজত্ব

    স্বপ্নচাষ ডেস্ক

    ০৮ মে ২০২০ ১০:৪১ পূর্বাহ্ণ

    বলিউডে খানদের রাজত্ব

    উপমহাদেশীয় দর্শক যেমন সিনেমাপাগল ঠিক তেমনি ধর্মীয় অনুভূতিও তাদের মধ্যে ততটাই মূল্য বহন করে। আর সেই বিচারে নিজ গোষ্ঠী কিংবা ধর্মের মানুষের তারকাখ্যাতি আহামরি কোনো বিশেষ অর্থ বহন না করলেও খানিকটা যে অনুরণন ঘটে না সেটা হলফ করে বলাটা অত সহজ নয়। অন্যদিকে ইতিহাস বিচার করলে গণতন্ত্রের পতাকা ঊর্ধ্বমুখী থাকা সত্ত্বেও ভারতবর্ষের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে মুসলমান তারকাদের উঠে আসাটা যে খুব একটা সহজ কিংবা সুখপ্রদ ছিল, সেটা বলাও ভুল হবে।

    ১৮৯৫-এর লুমিয়ের ব্রাদার্সের পয়লা সিনেমা প্রদর্শনের তিন বছরের মাথায় ১৮৯৮ সালে প্রফেসর স্টিভেনসন নামের এক ফিরিঙ্গি ভদ্রলোকের উৎসাহ ও ক্যামেরায় হিরালাল সেনের হাতে ‘দ্য ফ্লাওয়ার অব পার্সিয়া’র মাধ্যমে যে ইন্ডাস্ট্রির বীজ বোনা হয় তার ডালপালায় মুসলিম ভারতীয়দের অনুপ্রবেশটা হয় আরও বহু পরে। রক্ষণশীল মুসলিম সমাজের প্রথা ভঙ্গ করে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে নাম লেখানো তৎকালীন অনেক মুসলমান তরুণের কাছেই ছিল স্বপ্নাতীত। এমনকি নারীদের সিনেমায় আসার পথটাও একরকম রুদ্ধ ছিল বললেও ভুল হবে না। পুরুষ অভিনেতাদেরই দেখা যায় তখনকার ছবিগুলোতে চওড়া মেকআপের আড়ালে নারী সাজার দুর্দান্ত প্রচেষ্টায়। তবে যতই দিন যেতে থাকল ততই কুসংস্কার আর অযাচিত ভুল ধারণার শিকল ছিঁড়ে মানুষের অগ্রযাত্রায় সম্ভব হয়ে উঠতে শুরু করল অনেক অসম্ভব।

    ১৯৪৪-এ এসে মুসলমানদের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে জড়ানোর ফিতে কাটার পেছনে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা মানুষ দীলিপ কুমার। পারিবারিক নাম মুহাম্মদ ইউসুফ খান। তৎকালীন মুসলমান সমাজের রক্ষণশীল চিন্তাধারা কিংবা হিন্দুপ্রধান দর্শকের কাছে গ্রহণযোগ্য পাবে কিনা সেই ভয়ে অবশ্য সিনেমা হিরোর নাম হিসেবে পারিবারিক নাম বদলে নিতে হয় ‘দীলিপ কুমার’ পরিচয়। তবে বলিউড ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে মুসলমানদের আগমনকে আরও মোটা দাগে বিবেচনা করলে অবশ্য কণ্ঠশিল্পী মোহাম্মদ ওয়াজির খানকে অস্বীকার করার সুযোগ থাকে না। ১৯৪১-এ ‘আলম আরা’ ছবিতে তার গাওয়া ‘দে দে খুদা কে নাম পে’ গানটির জন্য তার অবস্থান বলিউডি মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে চিরকাল। নাম পরিবর্তনের বিষয়টা যে খালি দীলিপের জন্যই হয়েছিল সেটা বলা অর্থহীন। মুমতাজ জাহান বেগমের ‘মধুবালা’ কিংবা কুখ্যাত খলঅভিনেতা অজিতের প্রকৃত নাম হামিদ আলী খান সেই তথ্যেরই সাক্ষ্য রাখে। একসময় খলচরিত্রে হামিদ আলী খানের যোগ্য উত্তরসূরি হয়ে সেলুলয়েড কাঁপান আমজাদ খান। দীলিপ কুমার যে খান সাম্রাজ্যের বীজ বপন করেছিলেন নব্বইয়ের দশকের আগে ও পরে কাছাকাছি সময়ে সেই নৌকার হাল ধরতে দেখা যায়, খান সাম্রাজ্যের নতুন কা-ারি সালমান খান, শাহরুখ খান, আমির খান, সাইফ আলী খান, ইরফান খানদের। এদের মাঝে সরাসরি ফিল্মি তলিকায় মা শর্মিলা ঠাকুরের আঁচল তলে সাঈফ, বাবা চিত্রনাট্যকার সেলিম খানের তত্ত্বাবধানে সালমান ও তার ভাইগোষ্ঠী এবং বাবা লেখক-পরিচালক ও প্রযোজক তাহির হোসেনের পথপ্রদর্শনে ফিল্মি পথে পা পড়ে আমিরের। তবে সেদিক থেকে ফিল্মি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই ছোট পর্দায় গুটিকয়েক অভিনয়ের মাধ্যমে বড় পর্দায় এসে ধুন্ধুমার কা- ঘটিয়ে দেন হালের বলিউড বাদশাহ শাহরুখ খান। এরাই মূলত হালের খান সাম্রাজ্যের ধরে রাখার নেপথ্যের মূল নায়ক। হালের মূল খান সাম্রাজ্যে সরাসরি সম্পৃক্ত না হলেও পরিচালক ফারাহ খান, সাজিদ খানের নামও অনুচ্চারিত থাকার মতো নয়। বাবা ফিরোজ খানের জনপ্রিয়তার ধারে কাছে পৌঁছতে না পারলেও ফারদিন খান কিছু সময়ের জন্য হলেও পরিচিতি তৈরি করেন বলিউডে।
    এছাড়া এখনো বলিউডকে বলা হয় খানদের সাম্রাজ্য। সালমান, আমির ও শাহরুখ বলিউডের তিন খান। কিন্তু সাম্রাজ্যের অধিপতি কে? সত্যিকারের খান সম্রাটের খোঁজ করতে গিয়ে অদ্ভুত এক ফলাফলই চোখে পড়ে। কারণ এই তিন খানই তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে আধিপত্য ধরে রেখেছেন। অর্থাৎ তিনজনই নিজ নিজ ক্ষেত্রে সম্রাট। ভারতের বক্স অফিসের জনপ্রিয়তার হিসেবে ‘সম্রাট’ হিসেবে যে খানকে এগিয়ে রাখা যাবে তিনি সালমান খান। আর যদি ছবির মান বা রেটিং বিবেচনা করা যায় তবে আমির খানই হচ্ছেন আসল সম্রাট। তবে শাহরুখ খানকে কী বলবেন? শাহরুখ খান হচ্ছেন ‘বলিউড বাদশাহ’। অর্থ-সম্পদ উপার্জনের দিক দিয়ে তিনিই সম্রাট।

    কিন্তু বলিউডের এই শীর্ষ তিন অভিনেতার সর্বশেষ সাতটি ছবি বিবেচনায় ধরলে দেখা যাবে বক্স অফিসে জনপ্রিয়তার হিসেবে সালমান খানই সেরা। ২০১০ সালে মুক্তি পেয়েছিল সালমান খানের ‘দাবাং’। এরপর ২০১১ সালে মুক্তি পেয়েছে ‘রেডি’ ও ‘বডিগার্ড’ ছবি দুটি। ২০১২ সালে মুক্তি পায় ‘এক থা টাইগার’ ও ‘দাবাং ২’। ২০১৪ সালে মুক্তি পেয়েছে ‘জয় হো’ ও ‘কিক’। সালমানের এই সাতটি ছবির আয়ের পরিমাণ এক হাজার ১১৭ কোটি রুপি ছাড়িয়েছে। ভারতের বক্স অফিসে ছবিগুলো আয় করেছে যথাক্রমে ১৪১, ১৩১, ১৬১, ১৯৯, ১৭৮, ১০৭ ও ২০০ কোটি রুপি।

    মশলাদার ছবি হিসেবে সালমানের মোট আয়ের পরিমাণ বেশি হলেও আইএমডিবির রেটিংয়ে শাহরুখ ও আমিরের চেয়ে পিছিয়েই আছেন তিনি। তার সাতটি ছবির গড় রেটিং ১০-এর মধ্যে মাত্র ৫.৪। সেই তুলনায় আমির খানের রেটিং সাতের ওপরে। রেটিংয়ে সালমান অভিনীত দাবাং ও কিক ছবিগুলো সর্বোচ্চ ৬.৩ করে রেটিং পেয়েছে।

    আমির খানকে বলা হয় নিখুঁত অভিনেতা বা ‘মি. পারফেকশনিস্ট’। তার সর্বশেষ ছবি ‘ধুম থি’্র মুক্তি পেয়েছে গত বছর। এ ছবিটি শুধু ভারতে আয় করেছে ২৮৪ কোটি রুপি। আমিরের সর্বশেষ সাতটি ছবির আয় হিসাব করলে দেখা যায় তা থেকে মোট ৭৮৯ কোটি রুপি আয় হয়েছে। কিন্তু আইএমডিবির রেটিংয়ের বিবেচনায় তিনিই শীর্ষে। তার এই ছবিগুলোর গড় রেটিং ৭.৪। আমিরের ‘রং দে বাসন্তী’ ছবিটি মাত্র ৪০ কোটি রুপি আয় করলেও রেটিং পেয়েছে ৮.৫। ওই বছরই মুক্তি পাওয়া ফানা ছবিটি ৪৪ কোটি রুপি আয় করে। কিন্তু রেটিং পায় ৭.২। আমিরের মুক্তি পাওয়া ছবিটির নাম ‘গজনি’। এটি আয় করে ১১৪ কোটি রুপি। এর রেটিং ৭.৩। জনপ্রিয় ছবি ‘থ্রি ইডিয়টস’ আয় করে ২০২ কোটি রুপি। এ ছবিটির রেটিংও ৮.৫। তালাশ ছবিটি ৯১ কোটি রুপি আয় করে। এর রেটিং ৭.৪।

    এবার আসা যাক শাহরুখের সাম্রাজ্যে। শাহরুখের সাতটি ছবি ভারতে আয় করেছে ৮২৮ কোটি রুপি। ছবিগুলোর গড় রেটিং ৬.৬। সাতটি ছবির মধ্যে বেশি আয় করেছে ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’ ছবিটি। এ ছবিটির আয় ২০৮ কোটি রুপি। শাহরুখের ‘বিল্ল’, ‘মাই নেম ইজ খান’, ‘ডন ২’, ‘যব তক হ্যায় জান’, ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’ এবং ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’। এ ছবিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো রেটিং পেয়েছে মাই নেম ইজ খান ছবিটি। এর রেটিং ৭.৯। কিন্তু ৬০ কোটি ডলার অর্থ সম্পদের বিবেচনায় সালমান ও আমির খানের চেয়ে অনেক এগিয়ে রয়েছেন শাহরুখ খান।

    স্বপ্নচাষ/আরএস

    Facebook Comments Box
    স্বপ্নচাষ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন  

    বাংলাদেশ সময়: ১০:৪১ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০৮ মে ২০২০

    swapnochash24.com |

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
     
    ১০১১১২১৩১৪১৫
    ১৬১৭১৮১৯২০২১২২
    ২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
    ৩০  
    advertisement

    সম্পাদক : এনায়েত করিম

    প্রধান কার্যালয় : ৫৩০ (২য় তলা), দড়িখরবোনা, উপশহর মোড়, রাজশাহী-৬২০২
    ফোন : ০১৫৫৮১৪৫৫২৪ email : sopnochas24@gmail.com

    ©- 2023 স্বপ্নচাষ.কম কর্তৃক সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত।