মহামারীর সময় আরেকটি সার্বজনীন প্রতিক্রিয়া হলো গুজব এবং ভুল তথ্য ছড়ানো। অতীতের মহামারীগুলোতে গুজব ছড়িয়েছে কারণ তখন সঠিক তথ্য পাওয়া ও সামগ্রিক পরিস্থিতি দেখতে পারাটা ছিল অসম্ভব।
সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ওরহান পামুক মার্কিন সংবাদ মাধ্যম দ্যা নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত নিবন্ধে এসব কথা বলেন। মূল নিবন্ধটি টার্কিশ ভাষায় লেখা। মূল থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করে প্রকাশ করে নিউ ইয়র্ক টাইমস।
ওরহান পামুক বলেন, মহামারীর সময় সবচেয়ে প্রচলিত দুটি গুজব হলো, কে এই রোগটি এনেছে এবং কোথা থেকে এই রোগটি এসেছে। মার্চের মাঝামাঝিতে যখন তুরস্কে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, তখন ইস্তাম্বুলে আমার প্রতিবেশী এবং সিহাঙ্গিরে আমার ব্যাংকের ম্যানেজার বিজ্ঞের মতো আমাকে বলেছিলেন যে ‘এই জিনিসটি’ আমেরিকা এবং বাকি বিশ্বের বিরুদ্ধে চীনের অর্থনৈতিক প্রতিশোধ। বাকি সব অশুভ শক্তির মতো মহামারীকে সব সময় বহিরাগত হিসাবে চিহ্নিত করা হয়।
তিনি বলেন, মনে করা হয়, প্রথমে এটা অন্য কোথাও আঘাত হেনেছিল এবং তারা সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি তাই আমার এলাকা আক্রান্ত হয়েছে। যেমন, অ্যাথেন্সে প্লেগ ছড়িয়ে পড়ার বিবরণের শুরুতে থুসিডিডিস লিখেন, এই মহামারী ইথিওপিয়া এবং মিসরের মতো অনেক দূরের দেশে প্রথম শুরু হয়েছিল।
ওরহান পামুক বলেন, গত চার বছর ধরে আমি ‘নাইটস অব প্লেগ’ নামে একটি ঐতিহাসিক উপন্যাস লিখছি। উপন্যাসটির পটভূমি ১৯০১ সালের তৃতীয় প্লেগ মহামারী। বুবোনিক প্লেগে সেবার এশিয়াতে লাখ লাখ মানুষ মারা গিয়েছিল। সে তুলনায় ইউরোপে প্রাণহানির সংখ্যা ছিল কম। গত দুই মাস ধরে আমার বন্ধু, স্বজন, সাংবাদিক, সম্পাদক যারা নাইটস অব প্লেগের বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানেন, তারা মহামারী নিয়ে আমাকে একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছেন।
‘তাদের কৌতূহলের বিষয়বস্তু, অতীতের প্লেগ ও কলেরা মহামারীর সঙ্গে বর্তমানের করোনাভাইরাস মহামারীর সাদৃশ্য আছে কি না। হ্যাঁ, অনেক জায়গায় সাদৃশ্য আছে। ইতিহাস ও সাহিত্যের মহামারীগুলো একই রকম। এটা শুধু জীবাণু বা ভাইরাসের মিলের কারণে নয় বরং সব মহামারীর সম্মুখে আমাদের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া সব সময় একই ছিল।’
নোবেল বিজয়ী এ সাহিত্যিক বলেন, সব মহামারীর প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ছিল মহামারীকে অস্বীকার করা। প্রতিবারই জাতীয় এবং স্থানীয় সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নিতে দেরি করে। তথ্য-উপাত্ত বিকৃত করে মহামারীর উপস্থিতিকেই নাকচ করে দেয়।
তিনি বলেন, “১৬৬৪ সালের প্লেগ মহামারী নিয়ে ড্যানিয়েল ডিফো লিখেন ‘এ জার্নাল অব দ্যা প্লেগ ইয়ার’। সংক্রমণ ও মানব আচরণের উপর সবচেয়ে ভালো সাহিত্যকর্ম বলা যায় এটিকে। বইটির শুরুর দিকে দেখা যায়, কীভাবে লন্ডনের আশপাশের এলাকার কর্তৃপক্ষ প্লেগের কারণে মৃতের সংখ্যা কমিয়ে দেখানোর জন্য মৃত্যুর কারণ হিসেবে নতুন নতুন রোগ আবিষ্কার করে ফেলে।”
স্বপ্নচাষ/আরএস
বাংলাদেশ সময়: ১:৩৪ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১৭ মে ২০২০
swapnochash24.com | sopnochas24