করোনা পরিস্থিতিতেই ওএমএসের আবেদনের সাথে দেয়ার জন্য ডিও লেটারে সুপারিশ করাকে কেন্দ্র রংপুর মহানগরীর পল্লীনিবাসে একজন বয়োজ্যেষ্ঠ প্রবীন নেতাকে মারপিট করে পুলিশে দেয়ার ঘটনায় লংকাকাণ্ড চলছে রংপুরে।
এনিয়ে করোনাকালেই কর্মসূচির মাধ্যমে প্রকাশ্য বিরোধে জড়িয়ে পড়েছেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য, রংপুর মহানগর সভাপতি ও সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা এবং যুগ্ম মহাসচিব ও রংপুর ৩ আসনের এমপি রাহগীর আলমাহি সাদ এরশাদ।
এ ঘটনার প্রতিবাদে নগরীতে মেয়র বিপুল পরিমাণ নেতাকর্মী নিয়ে গ্রেফতার জাপা নেতার মুক্তি ও সাদ এরশাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল এবং এমপি তার স্ত্রীকে নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেছে।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১২ টায় নগরীর সেন্ট্রাল রোডের জাতীয় পার্টি কার্যালয় থেকে বিক্ষোভের আগে সিটি মেয়র ও জাতীয় পার্টির মহাসচিব মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা প্রেস ব্রিফিং করে সাংবাদিকদের জানান, জাতীয় পার্টির ইতিহাসে জাতীয় পার্টিরই একজন সংসদ সদস্যের লেলিয়ে দেয়া গুন্ডাবাহিনী দিয়ে মহানগর জাতীয় পার্টির সহসভাপতি, ২৭ নং ওয়ার্ড সভাপতি ও এরশাদ মুক্তি আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী আমাদের সিনিয়র নেতা টিপু সুলতান রংপুরীকে বেধড়ক পিটিয়ে পিটিয়ে আহত করা এবং তাকে থানায় সোপর্দ করার বিপক্ষে আমার এই অবস্থান।
শান্তিপুর্ন বিক্ষোভের মাধ্যমে জড়িত সন্ত্রাসীদেও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার ও টিপু সুলতানের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান মেয়র। প্রশাসন যদি এ বিষয়ে কোন ব্যবস্থা না নেয় তাহলে আল্টিমেটামের সময় শেষ হওয়ার পর আমরা বিক্ষোভ, স্মারকলিপিসহ আরও কঠোর কর্মসূচি দিব।
তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি একটি শান্তিপুর্ন দল। আমরা সহিংসতায় বিশ্বাস করি না।কিন্তু একজন সিনিয়র নেতার প্রতি যে অসম্মান করা হয়েছে, তার প্রতিবাদ করাই আমার নৈতিক দায়িত্ব। এখন দেশে একটা করোনাকালিন অচলাবস্থা বিরাজ করছে।
মেয়র আরও বলেন, তার মাঝেও যেহেতু দল আমরা করি, দলকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে, দলের কর্মীদের সম্মান বাঁচানোর স্বার্থে আমাদের নেতাদের আন্দোলনে যাওয়া ছাড়া আর কোন পথ খোলা নেই।
তিনি বলেন, আমাদের কর্মসূচি অগ্নিগর্ভ হতো, কিন্তু করোনাকালীন পরিস্থতির কারণে আমরা সীমিত পরিসরে আন্দোলন অব্যাহত রাখবো। ঘটনার পরপরই আমি সেখানে গিয়েছিলাম, কিন্তু তারা এমপি মহোদয় আমার কাছে আসেন নি এমনটি আমাকে উপরেও উঠার কথাও বলেননি। উপরন্ত পুলিশ প্রটেকশন দিয়ে তার গুন্ডাবাহিনী দিয়ে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের ওপর হাত তুলেছে।
এসময় জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাজী আব্দুর রাজ্জাক, মহানগর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন, জাহিদুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক হাসানুজ্জামান নাজিম, মহানগর জাতীয় যুব সংহতির সভাপতি শাহিন হোসেন জাকির, সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন কাদেরী, মহানগর ছাত্র সমাজের সভাপতি ইয়াসির আরাফাত, সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম ছোটসহ জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টির নেতৃবৃন্দ তার পাশে ছিলেন। পরে মেয়রের নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল নগরীর জাহাজ কোম্পানী মোড়-বেতপট্রি হয়ে টাউন হল চত্বরে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
অন্যদিকে বিক্ষোভ মিছিলের পর বেলা দেড় টায় পল্লীনিবাসে সস্ত্রীক সাংবাদিক সম্মেলন করেন জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব ও রংপুর-৩ আসনের এমপি রাহগির আলমাহি সাদ এরশাদ। এ সময় তার পাশে কোন নেতাকর্মী ছিলেন না। এ সময় সাদ এরশাদ বলেন, অবৈধ ডিও লেটারে সাইন করা নিয়ে আমার ওপর হামলা হয়। একজন নেতা আমার কাছে অবৈধ ডিওলেটারে সাইনের জন্য চাপ দিলে আমি সেটা করিনি। সে কারণে প্রথমে আমার ওপর গালাগালি করেছে, খবরদারি করেছে । পরে আমার ওয়াইফের ওপর খারাপ আচরণ করে।
তিনি বলেন, কয়েকজন বিশেষ ব্যক্তি রংপুরের উন্নয়ন চাচ্ছে না। এ জন্য আমার ওপর হামলা হয়। যেন রংপুরের মানুষ উন্নয়ন থেকে বঞ্ছিত হয়। এ ঘটনার মাধ্যমে আমার জীবন নিয়ে খেলা হচ্ছে। আমার লাইফ এখন রিস্কে আছে। এটা নিয়ে আমি সাইকোলিজ্যকালী ডিস্টার্ব আছি। এই হামলার সাথে ছোট বড় অনেকেই আছে পলিটিক্যাল সিনারিওতে।
সাংসদ অভিযোগ করেন, আমার উপর হামলার সাথে জাতীয় পার্টির লোক আছে। অন্যান্য পার্টিরও লোক আছে। আবার ভাড়া করা লোক থাকতে পারে আমার জানা নেই। আমি ভালো কাজ করেছি বলেই আমার ওপর হামলা হয়েছে।
তিনি বলেন, বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেত্রী, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিবকে জানানো হয়েছে। দেখা যাক তারা কি করেন।
তিনি বলেন, ওনি (মেয়র) এখানে এসে আমাকে নিচে ডেকেছিলেন। কিন্তু আমি আসি নি। কারণ তখন ভাংচুর চলছিল। আমি জীবন নিয়ে শংকিত ছিলাম। ওনি আমার কাছে এসে প্রথমে বিষয়টি জানতেও চাননি। এসময় তিনি পল্লীনিবাসে নেশার আসর এবং জামায়াত শিবিরের লোকজনকে পৃষ্ঠপোষকতার বিষয়েও তদন্ত করার কথা জানিয়ে বলেন, মঙ্গলবার রাতে কী হয়েছে সেটি প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। তারা তদন্ত করে দেখছেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে এমপির স্ত্রী মহিমা এরশাদ বলেন, জাপা নেতা টিপু সুলতান পার্টির অনেক লোক নিয়ে আসে। এবং আমাকে ও আমার মাকে নিয়ে অশ্রাব্য ভাষায় (শব্দগুলি তিনি উচারণ করেছেন, কিন্তু প্রকাশ যোগ্য নয়) গালিগালাজ করেছে। আমার সাথে চরম খারাপ আচরণ করা হয়েছে। পার্টির অনেক লোকজন সেখানে ছিলেন কেউ কিছুই বলেন নি। একজন এমপির বউ, এরশাদ পরিবারের বউ বাদ দিলাম। কিন্তু একজন নারী হিসেবে বিষয়টি আমি পুলিশকে জানিয়েছি। তার একে একটু বিলম্বে তাকে নিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, আমাকে যে অসম্মান করবে, আমার মাকে যে অসম্মান করবে আমি তাকে ছেড়ে দিব না।
মহিমা এরশাদ বলেন, আমার এবং আমার স্বামীর ওপর হামলা চালানো হলো। আবার আমাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হলো। কেন্দ্রের কেন এখানে ভুমিকা নেই। জাতীয় পার্টির নেতা কর্মীরাই তো এসে এসব করেছে। এরশাদের পুত্রবধূ হিসেবেও কী তাদের কোন দায়িত্ব নেই।
তিনি অভিযোগ করেন রংপুরের মাটি এরশাদেও ঘাটি বলা হয। কিন্তু কেন জানি, এরশাদ ফ্যামিলির লোক এখানে পলিটিক্স করতে পারে না। আগে আসিফ শাহরিয়ার পারে নাই, এখন সাদ এরশাদ পারতেছে না। তাহলে কী এরশাদ ফ্যামিলিকে সরিয়ে দেওয়ায় তাদের মূল উদ্দেশ্য? ব্যাপারটা এমন যে এরশাদ ফ্যামিলি চলে যাবে, ওরা রাজনীতি করবে। বক্তব্যের সময় তিনি দুইবার কেঁদে ফেলেন। এসময় তিনি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সঠিক তথ্য পরিবেশন না করার অভিযোগও করেন।
প্রসঙ্গত এরশাদ মারা যাওয়ার আগে পল্লীনিবাসের সব স্থাবর অস্থাবর সম্পত্বি তার অপর পুত্র এরিশ এরশাদের নামে উইল করে দিয়েছেন।
স্বপ্নচাষ/আরএস
বাংলাদেশ সময়: ৬:০৫ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ০৫ জুন ২০২০
swapnochash24.com | sopnochas24