দেশের জেলা ও উপজেলাগুলোতে করোনাভাইরাস এখন সামাজিকভাবে বিস্তার (কমিউনিটি ট্রান্সমিশন) লাভ করতে শুরু করেছে। আর তা প্রতিরোধে সন্দেহভাজনদের নমুনা পরীক্ষা বৃদ্ধির ওপর জোড় দেয়া হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আটটি বিভাগের পাশাপাশি জেলা পর্যায়েও করোনা পরীক্ষা ল্যাব স্থাপনের কথা ভাবছে সরকার।
তবে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (রামেক) করোনা পরীক্ষার ল্যাব চালুর পর থেকে শুক্রবার করে ল্যাবটি বন্ধ থাকছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানটির দাবি টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে শুক্রবারে ল্যাবে পরীক্ষা সম্ভব হয়নি। এছাড়া ল্যাবে জনবলেও সংকট রয়েছে। আর গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টি সম্পর্কে কিছুই জানেন না রাজশাহীর স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক।
এদিকে, দিন যতোই গড়াচ্ছে রাজশাহী বিভাগের আটটি জেলা থেকে সন্দেহভাজন করোনা রোগীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা একটি মাত্র ল্যাব দিয়ে পরীক্ষা করা দূরহ হয়ে পড়ছে। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে রাজশাহী বিভাগে আরও অন্তত দুইটি ল্যাব চালুর দাবি জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা।
সূত্র জানায়, রাজশাহী বিভাগের আটটি জেলার সন্দেহভাজনদের করোনা পরীক্ষার জন্য ১ এপ্রিল থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে (রামেক) স্থাপন করা হয়েছে ল্যাব। রামেক এর ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. সাবেরা গুলনেহারকে প্রধান করে ৩০ সদস্যের টেকনিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। সদস্যরা পৃথক পৃথক টিমে পালাক্রমে ল্যবটি পরিচালনা করে আসছেন। তবে ল্যাবটি চালুর পর থেকেই শুক্রবার করে (৩, ১০ ও ১৭ এপ্রিল) বন্ধ রাখা হয়। এতে করে ল্যাবে নমুনা এসে জমা পড়লেও তা সময়মতো পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে বাড়ছে নমুনার জট; বাড়ছে ঝুঁকি। আর সন্দেহভাজন রোগীদের নমুনা সময়মতো পরীক্ষা না হওয়ায় ওই সকল রোগীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
ল্যাব সংশ্লিষ্টদের দেয়া তথ্য মতে, গত ১ এপ্রিল ল্যাব চালুর পর ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত রাজশাহী বিভাগের আটটি জেলা থেকে ১২১২ জনের নমুনা এসেছে। যার মধ্যে পরীক্ষা হয়েছে ৮২৮ জনের। এদের মধ্যে ৯ জনের নমুনায় করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
এদিকে ১২শ জনের মধ্যে ৩৫০টিরও বেশি নমুনা পরীক্ষা সম্ভব হয়নি। এছাড়া এই ল্যাবটিতে ৯৪ জনের নমুনা একত্রে পরীক্ষা করা সম্ভব হলেও সংগৃহীত নমুনাগুলোতে ত্রুটি থাকায় তার সবগুলো পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে প্রতিদিন ৯৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করাও সম্ভব হচ্ছে না।
এসব বিষয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ভাইস প্রিন্সিপ্যাল ডা. বুলবুল হাসান বলেন, নমুনা সংগ্রহের পর সর্বোচ্চ দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে তা পরীক্ষা করতে হবে। তা না হলে নুমনার গুণগত মান নষ্ট হতে থাকে। এতে পরীক্ষার ফলাফল নিয়েও সন্দহের সৃষ্টি হয়।
তিনি আরও বলেন, নমুনা সংগ্রহ বৃদ্ধি করা হলেও রাজশাহী বিভাগের এই ল্যাবের সক্ষমতা সে অনুপাতে কম। একদিনে সর্বোচ্চ ৯৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব। এছাড়া ল্যাবে জনবলও কম আছে। তাই এই বিভাগে আরও ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। আশার কথা হচ্ছে বগুড়া জেলাতেও একটি ল্যাব প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে। ল্যাবটি দ্রুতই চালু হবে বলে আশা করছি।
রামেক হাসপাতালে একটি পিসিআর মেশিন পড়ে আছে। তা চালু করা গেলে সকলের জন্যই ভালো হবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে, উপজেলা পর্যায় থেকে পাঠানো নমুনাগুলোর প্যাটেকেটের গায়ে যে আইডি (নাম, ঠিকানা, বয়স) দেয়া থাকছে, ভেতরে থাকা নমুনার টেস্টটিউবের গায়ে একই আইডি থাকছে না। এতে নমুনা পরীক্ষায় গতি আসছে না। নষ্ট হচ্ছে সময় ও কীট। এর জন্য দায়ী করা হচ্ছে মাঠ পর্যায়ের নমুনা সংগ্রহকারীদের।
তবে নমুনাগুলো যাতে ত্রুটিমুক্ত থাকে সে বিষয়ে গুরুত্ব দেয়ার জন্য ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট জেলার সিভিল সার্জনদের বলা হয়েছে বলেও জানা গেছে।
শুক্রবার করোনা পরীক্ষা বন্ধ রাখার বিষয়ে রামেকের প্রিন্সিপ্যাল নওশাদ আলী জানান, ল্যাবের মেশিনে কিছু সমস্যা হয়েছে, তাই বন্ধ ছিল। শনিবার থেকে যথারীতি পরীক্ষা শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, করোনা ল্যাবে পরীক্ষাটি জটিল ও পুরো বিশ্বেই বিষয়টি নতুন। আমাদের জনবলের ঘাটতি আছে। তবে যারা কর্মরত আছেন তারা প্রত্যেই অত্যন্ত আন্তরিক। নতুনদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
নমুনা জটের বিষয়ে ডা. নওশাদ আলী আরও বলেন, প্রতিদিন নমুনার সংখ্যা বাড়ছে। তাই এই বিভাগে আরও ল্যাবের প্রয়োজন। আশা করছি দ্রুতই তা সম্ভব হবে। স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে আমরা যখন যে ধরণের সাহযোগিতা চাচ্ছি তা পূরণ করা হচ্ছে।
এদিকে, গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টি রাজশাহী স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক গোপেন্দ্র নাথ আচার্যের জানা নেই বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।
স্বপ্নচাষ/আরএস
বাংলাদেশ সময়: ১১:২৯ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২০
swapnochash24.com | Anaet Karim
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ||||||
২ | ৩ | ৪ | ৫ | ৬ | ৭ | ৮ |
৯ | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ |
১৬ | ১৭ | ১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ | ২২ |
২৩ | ২৪ | ২৫ | ২৬ | ২৭ | ২৮ | ২৯ |
৩০ | ৩১ |