• মঙ্গলবার ১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

    শিরোনাম

    স্বপ্নচাষ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন  

    নেই নিজ ভাষায় বই ও পড়ানোর শিক্ষক, বিপাকে আদিবাসী শিশুরা

    রায়হানা সুলতানা

    ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ৯:০২ অপরাহ্ণ

    নেই নিজ ভাষায় বই ও পড়ানোর শিক্ষক, বিপাকে আদিবাসী শিশুরা

    আদিবাসী সাওতাল শিশু শিক্ষার্থী ওমর টুডু পড়ে রাজশাহীর পবা উপজেলার আন্ধারকোঠা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রথম শ্রেণি শেষ করে এবার সে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উঠেছে। নতুন বছরের প্রথম দিনে বিনা মূল্যের বই পেয়ে দারুণ খুশি সে। কিন্তু পড়াশুনা করতে গিয়ে পড়েছে বিপাকে। কারণ নিজ ঘরে সে যে ভাষায় কথা বলে স্কুলে গিয়ে সে ভাষার কোনো অস্তিত্ব নেই। নেই নিজের ভাষার কথাবার্তাও। ফলে ঠিকমতো বাংলা পড়তে ও বুঝতে না পারলেও বাংলাতেই পড়াশুনা করতে হচ্ছে তাকে। কেননা, নিজেদের ভাষায় লেখাপড়ার সুযোগ নেই এই শিক্ষার্থীর।

    জানা যায়, প্রাক প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত অন্যান্য ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর শিশুদের হাতে নিজ ভাষার পাঠ্যপুস্তক তুলে দেয়া হলেও বর্ণ নির্বাচনের জটিলতায় আটকে যায় সাওতালি ভাষার পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের বিষয়টি। এতে শুধু ওমর টুডুই নয়, প্রাক প্রাথমিকে অধ্যয়নরত প্রায় ৫০ হাজার সাওতালি শিশু নিজ মাতৃভাষায় পড়াশুনার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে শিক্ষা জীবনের শুরুতেই হতাশাগ্রস্থ হয়ে ঝরে পড়ছে আদিবাসী শিক্ষার্থীরা। এছাড়া মাতৃভাষায় পড়ালেখার সুযোগ না থাকায় দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে তাদের নিজস্ব ভাষা। মায়ের ভাষা যেন হারিয়ে না যায় সেজন্য নিজ ভাষাতে পাঠ্যপুস্তক প্রদানসহ শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন আদিবাসী সাওতালি জনগণ।

    সম্প্রতি সরেজমিনে রাজশাহী জেলার পবা উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের হল্দিবনা গ্রামের আদিবাসী সাওতাল পল্লী ও তানোর উপজেলার সিঁন্দুকাই আদিবাসী সাওতাল পল্লী ঘুরে এসব তথ্য জানা যায়।

    উপজেলার আন্ধারকোঠা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অপর দুই শিক্ষার্থী জয় টপ্প ও বাসন্তি খালকো জানায়, এই স্কুলের বিভিন্ন শ্রেণিতে ২৫-৩০ জনের মতো আদিবাসী শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা করছি।

    বাড়িতে নিজেদের ভাষায় কথা বললেও স্কুলে বাংলা ভাষায় কথা বলতে হয়। নিজেদের ভাষার কোনও বই বা শিক্ষক না থাকায় আমাদের পড়শুনা করতে অনেক কষ্ট হয়। কারণ অনেক বিষয়ে শিক্ষকদের আমরা বুঝাতে পারি না, আবার কিছু বিষয়ে শিক্ষকও ঠিকমতো ভাষা বুঝতে পারে না। তাই অনেকে স্কুলেও আসতে চায় না।

    তানোর উপজেলার সিঁন্দুকাই আদিবাসী সাওতাল পল্লীর দুই যুবক বলেন, এই পল্লীতে ৩৫টির মতো পরিবার বসবাস করেন। তারা নিজেদের মধ্যে নিজ মাতৃভাষাতেই কথা বলে। কিন্তু সেই ভাষায় তার নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও কথা বলার সুযোগ পায় না। আবার নিজ ভাষায় বই ও পড়ানোর শিক্ষক না থাকায় পড়াশুনা চালিয়ে যেতে কষ্ট হয়। এছাড়া কোটা সুবিধা উঠে যাওয়ায় আমাদের চাকরির সুযোগও কমে গেছে। তাই এখন দিনমজুর হিসেবে মানুষের জমিতে কাজ করছি।

    এ বিষয়ে আদিবাসী সাওতাল নেত্রী সীমান্ত হেমব্রম বলেন, নিজের ভাষা ধরে রাখতে নিজ ভাষায় পড়ালেখা করা জরুরি। পাশাপাশি নিজ ভাষায় বই ও পড়ানোর শিক্ষক থাকলে খুব ভালো হতো। তাহলে বাচ্চারা ভালো মতো বুঝে শুনে পড়তে পারতো। এতে আমাদের সম্প্রদায়ের ছেলে মেয়েরা আরও শিক্ষিত হতো।

    তিনি আরও বলেন, বাঙালির ভাষা রক্ষার স্মৃতিবাহী মাস ফেব্রুয়ারি চলছে। অথচ এই মাসেও নিজ মাতৃভাষায় লেখাপড়া করা সুযোগ থেকে বঞ্চিত আদিবাসী সাওতাল শিশুরা।

     

    জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির মুখপাত্র ও দপ্তর সম্পাদক সুবাশ চন্দ্র হেমব্রম বলেন, আদিবাসী সাওতাল যে শিশু শিক্ষার্থীরা রয়েছে, তারা নিজ মাতৃভাষায় পড়াশুনা করতে চায়। কিন্তু সাওতালি ভাষার কোনো বইও নেই, শিক্ষকও নেই। নিজ মাতৃভাষার শিক্ষকরা যেভাবে বুঝাতে পারবে, অন্য জাতীগোষ্ঠীর যারা শিক্ষক রয়েছেন তারা সেভাবে পারবে না এটাই স্বাভাবিক। নিজের জাতীয় গোষ্ঠীর শিক্ষক না থাকায় প্রাথমিক পর্যায়ে একজন শিশুর যখন মেধার বিকাশ ঘটবে তখন শিক্ষক ও ছাত্রের যোগাযোগটা সঠিকভাবে হয় না। ফলে আদিবাসী অধ্যুশিত অঞ্চলগুলোতে আদিবাসী শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। তাহলেও নিজ মাতৃভাষার সাহায্যে পড়াশুনা শিখতে সুবিধা হবে। কিন্তু সরকার এখনও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। সরকার অন্যান্য আদিবাসীদের নিজ মাতৃভাষায় পড়াশুনা নিশ্চিত করতে যেভাবে দায়িত্ব নিয়ে চালু করেছে। সাওতালদের জটিলতা নিরশনেও সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে।

    তিনি আরও বলেন, পার্শবর্তী দেশ ভারতে সাওতালদের জন্য অলচেকি বর্ণমালাকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশেও অলচিকি বর্ণমালায় পড়াশুনা করতে চাই। বিশেষ করে লেখার রূপটা অলচিকি চাই।
    এছাড়া পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নেয়ার জন্য সরকারের বিশেষ পরিকল্পনায় আদিবাসীদের রাখতে হবে। এছাড়া কোটাবিরোধী আন্দোলনে তুলে দেয়া কোটার পুনর্বহাল করতে হবে। একইসঙ্গে সাওতাল ভাষাকে সংরক্ষণের দাবিও জানান তিনি।

    গবেষণা ও সংরক্ষণে সাওতাল ভাষাকে গুরুত্ব দেয়া উচিৎ বলে মনে করেন শিক্ষা বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও রাজশাহী-২ আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, মাতৃভাষায় কথা বলা ও পড়াশুনা করা সবার অধিকার। সাওতালদেরও নিজের ভাষার পড়ালেখার সুযোগ দিতে হবে। এক্ষেত্রে গবেষণা করে যারা শিক্ষা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ তারা যদি একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হন, নিশ্চয় একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যাবে।

    সাওতালি ভাষায় পাঠ্যপুস্তক রচিত হলে সবার জন্য শুভ হবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, প্রত্যেক আদিবাসী শিশুকে পড়ালেখার সুযোগ সৃষ্টি করতে রাষ্ট্রকেই দায়িত্ব নিতে হবে।

    স্বপ্নচাষ/একে

    Facebook Comments Box
    স্বপ্নচাষ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন  

    বাংলাদেশ সময়: ৯:০২ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

    swapnochash24.com |

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
     
    ১০১১১২১৩১৪১৫
    ১৬১৭১৮১৯২০২১২২
    ২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
    ৩০৩১  
    advertisement

    সম্পাদক : এনায়েত করিম

    প্রধান কার্যালয় : ৫৩০ (২য় তলা), দড়িখরবোনা, উপশহর মোড়, রাজশাহী-৬২০২
    ফোন : ০১৫৫৮১৪৫৫২৪ email : sopnochas24@gmail.com

    ©- 2024 স্বপ্নচাষ.কম কর্তৃক সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত।